নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুকে। এই আর্টিকেলে আমরা দেখবো উদ্ভিদ রেচন ও প্রাণীর রেচনের পার্থক্য। এর সঙ্গে আছে, উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি, প্রাণীর রেচনের বৈশিষ্ট্য। তাহলে চলুন এক এক করে প্রত্যেকটা পয়েন্ট দেখে নিই।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন ক্রিয়ার পার্থক্য
উদ্ভিদ | প্রাণী |
---|---|
1. রেচন পদার্থ নিষ্কাশন এর জন্য উদ্ভিদ দেহে নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গ থাকে না। পত্রমোচন, বাকল মোচন, গঁদ নিঃসরণ এর মাধ্যমে উদ্ভিদ রেচন পদার্থ, উদ্ভিদ দেহ থেকে ত্যাগ করে। | 1. প্রাণীর দেহে রেচন পদার্থ নিষ্কাশন এর জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ এবং তন্ত্র থাকে। |
2. অধিকাংশ উদ্ভিদ তাদের রেচন পদার্থ গুলি অদ্রাব্য কেলাস বা কোলয়েড রূপে দেহের কলা-কোশে সঞ্চয় করে রাখে। | 2. প্রাণীরা তাদের রেচন পদার্থ বেশি সময়ের জন্য দেহে সঞ্চিত রাখতে পারে না। প্রাণীরা তাদের রেচন পদার্থ এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নির্গত করে। (কয়েকটি সন্ধিপদ এবং সরিসৃপ প্রাণী তাদের রেচন পদার্থ সাময়িক ভাবে বহিঃকঙ্কালে সঞ্চয় করে রাখে)। |
3. উদ্ভিদ তাদের রেচন পদার্থ গুলি বিভিন্ন উপচিতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করে। উদ্ভিদের রেচন পদার্থ গুলির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি। | 3. প্রাণীরা তাদের রেচন পদার্থ পুনরায় ব্যবহার করতে পারে না। প্রাণীদের রেচন পদার্থের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম। |
4. উদ্ভিদ দেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কম হওয়ার জন্য এদের দেহে উৎপন্ন রেচন পদার্থের পরিমাণ খুব কম হয়। উদ্ভিদের দেহে নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ কম সৃষ্টি হয়। | 4. প্রাণীর দেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার বেশি হয়। এর ফলে প্রাণীদের দেহে উৎপন্ন রেচন পদার্থের পরিমাণ বেশি হয়। প্রাণী দেহে নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ তুলনামূলকভাবে বেশি উৎপন্ন হয়। |
5. উদ্ভিদ এর রেচন পদার্থ কম ক্ষতিকর। উদ্ভিদের রেচন পদার্থ, উদ্ভিদ দেহ থেকে দ্রুত অপসারিত না হলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। | 5. প্রাণীর রেচন পদার্থ বেশি ক্ষতিকর হয়। প্রাণীর রেচন পদার্থ, প্রাণীদেহ থেকে দ্রুত অপসারিত না হলে কোশের বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কমে যেতে পারে, এমনকি কোশের মৃত্যুও ঘটতে পারে। |
উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য
- উদ্ভিদের রেচন পদার্থ গুলি প্রাণীদের তুলনায় কম জটিল এবং কম ক্ষতিকারক হয়।
- উদ্ভিদের দেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কম হওয়ায় এদের দেহে রেচন পদার্থ কম পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
- উদ্ভিদ দেহে উৎপন্ন রেচন পদার্থ গুলি অধিকাংশই উপচিতি বিপাক এর মাধ্যমে বিভিন্ন কোশীয় দ্রব্যে সংশ্লেষিত হয়।
- উদ্ভিদের রেচন পদার্থ গুলির বেশিরভাগই কোষে কেলাস বা কোলয়েড হিসেবে সঞ্চিত থাকে।
- উদ্ভিদ দেহে কোন নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ বা তন্ত্র না থাকায় প্রাণীদের মতো উদ্ভিদরা তাদের রেচন পদার্থ দেহ থেকে নির্গত হতে পারে না।
উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগ এর পদ্ধতি
কোনো কোনো উদ্ভিদ কয়েকটি বিশেষ পদ্ধতিতে তাদের রেচন পদার্থ দেহ থেকে ত্যাগ করে। যেগুলি হলো —
1) পত্রমোচন
পর্ণমোচী উদ্ভিদ যেমন, শিমুল, শিরীষ, আমড়া, অশ্বত্থ ইত্যাদি উদ্ভিদ বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে পত্র মোচন করে পাতায় সঞ্চিত অবস্থায় থাকা রেচন পদার্থ ত্যাগ করে। বহুবর্ষজীবী চিরহরিৎ উদ্ভিদরা সারা বছর ধরে অল্পবিস্তর পাতা ঝরিয়ে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।
2) বাকল মোচন
কোনো কোনো উদ্ভিদ যেমন, অর্জুন, পেয়ারা ইত্যাদি উদ্ভিদ বাকল বা ছাল মোচন এর মাধ্যমে ত্বকে সঞ্চিত অবস্থায় থাকা রেচন পদার্থ ত্যাগ করে।
3) ফল মোচন
লেবু, তেতুল, আপেল ইত্যাদি ফলের ত্বকে বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড যেমন, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড রেচন পদার্থ হিসেবে সঞ্চিত থাকে। এই সমস্ত উদ্ভিদ পরিণত ফল মোচন করে দেহ থেকে রেচন পদার্থ অপসারণ করে।
প্রাণীর রেচনের বৈশিষ্ট্য
প্রাণীদেহে অপচিতি বিপাক এর ফলে অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড প্রভৃতি নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ এর সৃষ্টি হয়। এগুলি সাধারণত প্রাণীদের মূত্র এবং ঘাম এর সাহায্যে দেহ থেকে নির্গত হয়। এছাড়াও কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কিটোন বডি, বিলিরুবিন, বিলিভার্ডিন প্রভৃতি রেচন পদার্থ রুপে প্রাণী দেহে উৎপন্ন হয় এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় ওইসব রেচন পদার্থ গুলি প্রাণীর দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায়।
প্রাণীর রেচন এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল —
- প্রাণীদের রেচন পদার্থ তুলনামূলকভাবে বেশি জটিল হয় এবং বেশি ক্ষতিকারক হয়।
- প্রাণীদেহে প্রোটিন জাতীয় পদার্থের বিপাক বেশি হওয়ায় নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
- বেশিরভাগ প্রাণীদেহে রেচন অঙ্গ এবং তন্ত্র সৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রাণীরা রেচন পদার্থ গুলিকে দেহ থেকে বার করে দেয়।
- বিশেষ কয়েকটি প্রাণী ছাড়া প্রাণীদেহে রেচন পদার্থ সঞ্চিত থাকে না।
- প্রাণীদের রেচন পদার্থ পুনরায় ব্যবহৃত হয় না।