নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো তরলের পৃষ্ঠটান সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
তরলের পৃষ্ঠটান |
সকল তরলের একটি বিশেষ ধর্ম আছে, তরল পৃষ্ঠ সর্বদা সংকুচিত হতে চায় যাতে তার ক্ষেত্রফল যতটা সম্ভব কম হয়। তরল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সংকোচনের এই প্রবণতাকে তরলের পৃষ্ঠটান Surface Tension of Liquids) বলা হয়।
প্রথমেই আমরা জেনে নেবো তরলের পৃষ্ঠটানের সংজ্ঞা (Definition of surface tension of liquid)।
তরলের পৃষ্ঠটান কাকে বলে?
উত্তর:- কোন তরলের মুক্ত পৃষ্ঠের উপর একটি রেখা কল্পনা করা হলো। ওই রেখার সঙ্গে লম্বভাবে এবং পৃষ্ঠতলের সঙ্গে স্পর্শকীয়ভাবে রেখাটির প্রতি একক দৈর্ঘ্যের উপর কোনো একদিকে যে বল ক্রিয়া করে তাকে ওই তরলের পৃষ্ঠটান বলা হয়।
আমাদের সাধারন অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে জলকণা, বৃষ্টির ফোঁটা বা অল্প পরিমাণ পারদ সর্বদা গোলক আকার ধারণ করে। বাইরে থেকে অন্য বল ক্রিয়া না করলে অল্প পরিমাণ তরল সর্বদা গোলক আকার ধারণ করে থাকে। সমান আয়তন এর বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট বস্তুর মধ্যে গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল সর্বনিম্ন হয়। তাই জলকণার স্বাভাবিক প্রবণতা হলো গোলক আকার ধারণ করে পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল কমানো।
একটি পরিষ্কার তেলবিহীন সুচ জলের উপর সাবধানে রাখলে দেখা যায় সূচটি জলের উপর ভাসছে, ডুবে যাচ্ছে না। যেখানে সূচটি ভাসে সেখানে জলের পৃষ্ঠতল একটু অবনমিত বা নিচু হয়ে থাকে। টানটান করে রাখা রবারের পাতের উপর কিছু রাখলে সেটি যেমন একটু নিচু হয়ে যায় এক্ষেত্রেও তাই হয়।
মাকড়সা, মশা প্রভৃতি ছোটো ছোটো কীটপতঙ্গ জলের উপর দিয়ে হেঁটে গেলে দেখা যায়, যেখানে তাদের পা পড়ে সেখানে জলের পৃষ্ঠতল একটু অবনমিত হয়ে যায়। মনে হয় যেন জলতল রবারের পাতের মতো টানটান অবস্থায় আছে।
পৃষ্ঠটানের একক
CGS পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক হলো ডাইন/সেমি (dyn/cm)
FPS পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক হলো পাউন্ডাল/ফুট (poundal/ft)
SI পদ্ধতিতে পৃষ্ঠটানের একক হলো নিউটন/মিটার (N/m)
পৃষ্ঠটানের মাত্রা
পৃষ্ঠটান = বল/দৈর্ঘ্য = MLT-2/L = MT-2
এবার আমরা পৃষ্ঠটান এর বিকল্প সংজ্ঞা জানবো।
পৃষ্ঠটানের বিকল্প সংজ্ঞা কী?
তাপমাত্রা স্থির রেখে তরল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল একক পরিমাণ বৃদ্ধি করতে যে কার্য করা হয় তাকে ওই তাপমাত্রায় তরলের পৃষ্ঠটান বলা হয়।
এবার আমরা দেখবো পৃষ্ঠটান সম্পর্কিত কয়েকটি ঘটনা। তাহলে চলো দেখি নিই!
# জলে একখণ্ড কর্পূর ফেললে তাকে ইতস্তত নড়াচড়া করতে দেখা যায়। কর্পূর জলে দ্রবণীয়। জলের সংস্পর্শে এলে কর্পূর এর খন্ডের কোনো কোনো জায়গা অপর জায়গার চেয়ে বেশি দ্রবীভূত হয়। যে জায়গায় কর্পূর বেশি দ্রবীভূত হয় সেখানকার জল কর্পূর দ্বারা দূষিত হওয়ায় সেখানকার পৃষ্ঠটান অন্য জায়গার চেয়ে বেশি কমে যায়। পৃষ্ঠটানের পার্থক্যের জন্য একটি অসম বল কর্পূর এর উপর ক্রিয়া করে। তাই কর্পূরের খণ্ডটি এলোমেলোভাবে ইতস্তত নড়াচড়া করে।
# একটি রং করার তুলি জলে ডুবিয়ে বাইরে আনলে তুলির আঁশ গুলি পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। জলে ডোবানো অবস্থায় আঁশ গুলি ফাঁক ফাঁক অবস্থায় থাকে। কারণ জলের ভিতর পৃষ্ঠটান থাকে না, তাই আঁশ গুলিকে কাছাকাছি টানার বল ক্রিয়া করে না। বাইরে আনলে আঁশের মধ্যে জলের যে পাতলা সর আটকে থাকে পৃষ্ঠটান সেই সরের ক্ষেত্রফল কমানোর চেষ্টা করে। তাই আঁশ গুলি পরস্পরের কাছে সরে আসে এবং নিজেদের মধ্যে জড়িয়ে যায়।
# উত্তাল সমুদ্রের উপর তেল ছড়িয়ে দিলে বড় বড় ঢেউ থেমে যায়। বিশুদ্ধ জলের পৃষ্ঠটান তৈলাক্ত জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা অনেক বেশি। সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে দিলে ঢেউয়ের সঙ্গে হাওয়ার গতির অভিমুখে তেল ছড়িয়ে পড়ে। পিছনে বিশুদ্ধ জল থেকে যায়। তাই ঢেউয়ের সামনের দিকের জলের পৃষ্ঠটান, পিছনে জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষা হ্রাস পায়। পিছনের উচ্চ পৃষ্ঠটান যুক্ত জল, সামনের নিম্ন পৃষ্ঠটান যুক্ত জলকে পিছনে টানে। ফলে ঢেউয়ের উচ্চতা কমে যায়।
# ছাতার কাপড়, বর্ষাতি বা তাঁবুর কাপড়ের মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকতে পারে না। এই ধরনের কাপড়ে যে সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে তার মধ্যে বায়ু সহজে চলে যেতে পারে। কিন্তু বৃষ্টির জল ওই ছিদ্র দিয়ে গলে যায় না। কারণ, পৃষ্ঠটানের জন্য বৃষ্টির জল ছোটো ছোটো গোল বিন্দুর আকার ধারণ করে এবং কাপড়ের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়।
ময়লা কাপড় পরিষ্কার করার জন্য জলের ডিটারজেন্ট মেশানো হয় কেন?
উত্তর: জলের পৃষ্ঠটান অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় কাপড়ে ছিদ্র গুলিতে সহজে ঢুকতে পারে না। জলে ডিটারজেন্ট মেশালে জলের পৃষ্ঠটান কমে যায়। ফলে কাপড়ের ছিদ্র গুলিতে জল বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং ময়লা সহজেই দূর করতে পারে।
তরলের অভ্যন্তরে পৃষ্ঠটান ক্রিয়া করে কি?
উত্তর: তরলের অভ্যান্তরে পৃষ্ঠটান ক্রিয়া করে না।
তরল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সংকোচনের প্রবণতাকে কী বলে?
উত্তর: তরল পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল সংকোচনের প্রবণতাকে পৃষ্ঠটান বলে।
তাপমাত্রা বাড়লে সব তরলের পৃষ্ঠটান _____
উত্তর: তাপমাত্রা বাড়লে সব তরলের পৃষ্ঠটান কমে।
কেমন লাগছে বিজ্ঞানবুক পড়তে? অবশ্যই জানান কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। আপনি কি Bigyanbook এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে এক্ষুনি ইউটিউবে গিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞানবুক এর ইউটিউব চ্যানেল। ফলো করুন বিজ্ঞানবুক -কে ফেসবুকে। শেয়ার করুন এই আর্টিকেলটি অন্যান্যদের সাথে। পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক। ধন্যবাদ।।