জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্য

নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো জৈব যৌগ এবং অজৈব যৌগের পার্থক্য। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

Bigyanbook
জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্য


মানুষ তার দৈনিন্দিন জীবনে চাল, গম, ফল, শাকসবজি মাছ-মাংস, ঘি, মাখন ওষুধ পত্র, বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার করে আসছে। উদ্ভিদ এবং জীবজগৎ তথা জীব দেহ থেকে এগুলি পাওয়া যায় বলে এদের জৈব পদার্থ বলে। জৈব পদার্থের একটি আবশ্যিক উপাদান হলো কার্বন। কার্বনের সঙ্গে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার প্রভৃতি মৌল যুক্ত হয়ে এই জৈব পদার্থ গুলি তৈরি করে। তবে কার্বন থাকলে যে যৌগটি জৈব যৌগ হবে তা ঠিক নয়। কার্বনের অক্সাইড, সালফাইড, ধাতব কার্বনেট ও বাই কার্বনেট এবং আরো কিছু যৌগে কার্বন থাকলেও এরা জৈব যৌগ নয়।


জীবদেহের অধিকাংশ জৈব যৌগ দিয়ে। এজন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জৈবিক ক্রিয়াতে জৈব যৌগের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরী। যে জন বিক্রিয়া গুলিতে জৈব যৌগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি হল - দেহের পুষ্টি সাধন ও দেহের বৃদ্ধি, সংরক্ষন ও ক্ষয় পূরণ, চলনশক্তি, বংশ বিস্তার ও বংশধারার সংরক্ষন, রোগ নিরাময়।

অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবন ক্রিয়া অব্যাহত রাখতে জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিহার্য।


এবার আমরা দেখে নেবো জৈব যৌগ ও অজৈব যৌগের পার্থক্য।

জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্য

জৈব যৌগঅজৈব যৌগ
1) জৈব যৌগে কার্বন থাকবেই।1) কার্বন নেই এরকম অজৈব যৌগের সংখ্যা প্রচুর।
2) কার্বন এর সঙ্গে H, O, N, P, S, হ্যালোজেন এবং অল্প কয়েকটি ধাতুর সঙ্গে জৈব যৌগ তৈরি হলেও তাদের সংখ্যা দশ লক্ষের অধিক।2) অধিকাংশ মৌল দিয়ে অজৈব যৌগ গঠিত হলেও তাদের সংখ্যা 1 লক্ষেরও কম।
3) জৈব যৌগ গুলি সমযোজী। এদের গলনাংক ও স্ফুটনাংক কম এবং বেশির ভাগই উদ্বায়ী।3) অধিকাংশ অজৈব যৌগ তড়িৎযোজী। গলনাংক ও স্ফুটনাংক সাধারণত বেশি হয় এবং অনুদ্বায়ী।
4) জৈব যৌগ সমযোজী বলে, বেশিরভাগই পোলার দ্রাবক জলে অদ্রাব্য কিন্তু নন পোলার দ্রাবক বেনজিন অ্যালকোহল ইত্যাদিতে দ্রাব্য।4) তড়িৎযোজী বলে জলে দ্রাব্য এবং দ্রবণ আয়নিত হয়।
5) সমযোজী বলে জৈব যৌগ গুলির রাসায়নিক বিক্রিয়া ধীর গতিসম্পন্ন এবং উভমুখী।5) সাধারণত তড়িৎযোজী বলে রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্রুতগতিসম্পন্ন ও একমুখী অজৈব যৌগের ক্ষেত্রে।
6) জৈব যৌগ গুলিতে কার্বন এবং হাইড্রোজেন থাকার জন্য বেশিরভাগই দাহ্য।6) কয়েকটি ও অজৈব যৌগ দাহ্য হলেও বেশির ভাগই অদাহ্য।
7) কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন ধর্মের জন্য, জৈব যৌগের অণুর গঠন জটিল এবং আণবিক গুরুত্ব খুব বেশি হতে পারে।7) অজৈব যৌগের ক্ষেত্রে অণুর গঠন ও অপেক্ষাকৃত সরল এবং আণবিক গুরুত্ব তুলনায় কম।
8) জৈব যৌগে সমাবয়বতা ধর্ম বর্তমান।8) অজৈব যৌগে সমাবয়বতা নেই।
9) জৈব যৌগ গুলিকে কতগুলি সমগনীয় বা সমগোত্রীয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।9) সমগোত্রীয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায় না অজৈব যৌগ গুলিকে।
10) জৈব যৌগে পলিমারাইজেশন প্রক্রিয়ায় একটি যৌগের একাধিক অণু যুক্ত হয়ে পৃথক ধর্ম বিশিষ্ট বৃহৎ অণুর যৌগ গঠন করতে পারে।10) অজৈব যৌগে পলিমারাইজেশন দেখা যায় না।


জীবজ অণু কাকে বলে? (What is Biomolecule?)

উত্তর: যেসকল জৈব পদার্থের অণু অস্তিত্ব রক্ষায় সক্ষম, অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন এবং যা জীবদেহে শক্তি উৎপাদন করে জৈবিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং অব্যাহত রাখে তাকে জীবজ অণু বা বায়ো মলিকুল বলে।


জীবজ অণুর উদাহরণ লেখো।

উত্তর: জীবজ অণুর উদাহরণ হলো, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, নিউক্লিক অ্যাসিড, লিপিড ইত্যাদি।


কার্বোহাইড্রেট কাকে বলে?

উত্তর: শ্বেতসার ও শর্করা জাতীয় খাদ্য গুলিকে কার্বোহাইড্রেট বলে।


রোগ নিরাময়ে জৈব যৌগের ভূমিকা লেখো।

উত্তর: রোগ নিরাময়ের জন্য কুইনাইন, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরোমাইসিন, প্রভৃতি জৈব যৌগ ওষুধ হিসাবে এবং ক্লোরোফর্ম, ইথার প্রভৃতি জৈব যৌগ চেতনানাশক রূপে ব্যবহৃত হয়।


দেহের পুষ্টি সাধন ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জৈব যৌগের ভূমিকা লেখো।

উত্তর: দেহের পুষ্টি সাধন ও বৃদ্ধির জন্য আমরা চাল, আটা এবং চিনি, মধু ও ফল জাতীয় কার্বোহাইড্রেট খাদ্য গ্রহণ করি। পরিপাক ক্রিয়ার এই জৈব যৌগ গুলি এক ধরনের এনজাইম বা উৎসেচকের অনুঘটন ক্রিয়ায় সরাসরি গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তের সঙ্গে মিশে দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুষ্টি সাধন করে।


বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জৈব যৌগের ভূমিকা কী?

উত্তর: জীবের বংশ বৃদ্ধি ও বংশগত বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য DNA (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) এবং RNA (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) জটিল জৈব যৌগ দুটি প্রয়োজন।


কেমন লাগছে বিজ্ঞানবুক পড়তে? অবশ্যই জানান কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে। আপনি কি Bigyanbook এর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে এক্ষুনি ইউটিউবে গিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞানবুক এর ইউটিউব চ্যানেল। ফলো করুন বিজ্ঞানবুক -কে ফেসবুকে। শেয়ার করুন এই আর্টিকেলটি অন্যান্যদের সাথে। পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক। ধন্যবাদ।।



❤️ from Bigyanbook

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন