সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের পার্থক্য

Bigyanbook

শ্বসন কাকে বলে ?

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোশস্থিত জৈব খাদ্যবস্তু জারিত হয়ে খাদ্য মধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি, গতি শক্তি বা তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত হয় যা বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন করে, তাকে শ্বসন বলে।


জীবদেহে প্রধানত দুই ধরনের শ্বসন দেখা যায়, যথাক্রমে — (১) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে শ্বসন অর্থাৎ সবাত শ্বসন এবং (২) অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শ্বসন অর্থাৎ অবাত শ্বসন।

তবে, অবাত শ্বসন আবার দু-ভাবে সম্পন্ন হয়। যেগুলি হলো — (ক) আণবিক অক্সিজেনের পরিবর্তে, অক্সিজেন যুক্ত যৌগের অক্সিজেনের সাহায্যে শ্বসন, যাকে প্রকৃত অবাত শ্বসন বলে এবং (খ) সম্পূর্ণভাবে বিনা অক্সিজেনে এবং বিশেষ উৎসেচকের প্রভাবে শ্বসন, যাকে সন্ধান বা ফারমেনটেশন বলে।


সবাত শ্বসন কাকে বলে ?

উত্তর : যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বায়ুজীবী কোশে শ্বসন বস্তু (প্রধানত গ্লুকোজ) অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তির সম্পূর্ণ মুক্তি ঘটে তাকে সবাত শ্বসন বলে।


অবাত শ্বসন কাকে বলে ?

উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় জীবকোশের শ্বসন বস্তু মুক্ত অক্সিজেন ছাড়াই, অক্সিজেন যুক্ত অজৈব যৌগের অক্সিজেন দ্বারা অসম্পূর্ণ ভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড, জল ও অক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তির আংশিক মুক্তি ঘটায় তাকে অবাত শ্বসন বলে।


সবাত শ্বসনের স্থান

সমস্ত বায়ুজীবী জীবকোশে সবাত শ্বসন সম্পন্ন হয়। সবাত শ্বসনের প্রথম পর্যায় অর্থাৎ গ্লাইকোলাইসিস ঘটে সাইটোপ্লাজমে এবং দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ ক্রেবস চক্র এবং তৃতীয় পর্যায় অর্থাৎ প্রান্তীয় শ্বসন ঘটে মাইটোকন্ড্রিয়া -তে।


অবাত শ্বসনের স্থান

অবাত শ্বসন অবায়ুজীবী পরজীবী প্রাণী, ছত্রাক ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ায় সম্পন্ন হয়।


সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের পার্থক্য

সবাত শ্বসন অবাত শ্বসন
1. মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ঘটে। 1. মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ঘটে।
2. শ্বসন বস্তু সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়। 2. শ্বসন বস্তু আংশিক জারিত হয়।
3. অধিক পরিমাণে ATP উৎপন্ন হয়। 3. স্বল্প পরিমাণে ATP উৎপন্ন হয়।
4. সাইটোপ্লাজম এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে ঘটে। 4. সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
5. এই শ্বসন প্রক্রিয়ায় শ্বসন বস্তুর সম্পূর্ণভাবে জারণের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন হয়। 5. এই শ্বসন প্রক্রিয়ায় শ্বসন বস্তুর আংশিক জারণের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড, জল এবং অন্যান্য জৈব যৌগ উৎপন্ন হয়।
6. তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা — গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র এবং প্রান্তীয় শ্বসন। 6. দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা — গ্লাইকোলাইসিস এবং পাইরুভিক অ্যাসিডের অসম্পূর্ণ জারণ।
7. অধিকাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহে ঘটে। 7. কিছু অণুজীব, পরজীবী প্রাণী, বীজ প্রভৃতির মধ্যে ঘটে।
8. এই শ্বসন প্রক্রিয়ায় পরিবেশের সঙ্গে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে। 8. এই শ্বসন প্রক্রিয়ায় পরিবেশের সঙ্গে গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে না।



১) শ্বসন হলো একপ্রকার —

(ক) জারণ প্রক্রিয়া

(খ) বিজারণ প্রক্রিয়া

(গ) গঠনমূলক প্রক্রিয়া

(ঘ) সবকটি

২) প্রাণী কলার ক্ষেত্রে অবাত শ্বসনে উৎপন্ন হয় —

(ক) ইথাইল অ্যালকোহল

(খ) কার্বন ডাই অক্সাইড

(গ) ল্যাকটিক অ্যাসিড

(ঘ) জল

৩) শ্বসনে পাইরুভিক অ্যাসিড থেকে অ্যাসিটাইল CoA রূপান্তর কোন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় ?

(ক) জারকীয় ডিহাইড্রেশন

(খ) জারকীয় ফসফোরাইলেশন

(গ) জারকীয় ডিকার্বক্সিলেশন

(ঘ) জারকীয় ডিহাইড্রোজিনেশন

৪) সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনের সাধারণ পর্যায়কে বলে —

(ক) ক্রেবস চক্র

(খ) কোরিচক্র

(গ) গ্লাইকোলাইসিস

(ঘ) অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন

৫) সবাত শ্বসন ও অবাত শ্বসনে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড এর অনুপাত হলো —

(ক) ৩:১

(খ) ২:১

(গ) ৪:১

(ঘ) ১:১

৬) ক্রেবস চক্রে কতগুলি ধাপে জারণ ঘটে ?

(ক) ৪

(খ) ৬

(গ) ২

(ঘ) ১

৭) এক অণু গ্লুকোজ গ্লাইকোলাইসিসে কত অণু অক্সিজেন ব্যবহার হয় ?

(ক) ১ অণু

(খ) ০ অণু

(গ) ৮ অণু

(ঘ) ৬ অণু

৮) সবাত শ্বসন পথকে বলা যায় —

(ক) উপচিতিমূলক

(খ) অপচিতিমূলক

(গ) প্যারাবোলিক

(ঘ) অ্যাম্ফিবোলিক

** ক্রেবস চক্রে একই সঙ্গে অপচিতি ও উপচিতিমূলক ক্রিয়া উভয়ই পরিলক্ষিত হয় বলে ক্রেবস চক্রকে অ্যাম্ফিবোলিক পথ বলে।


উত্তর :—

১) ক - জারণ প্রক্রিয়া, ২) গ - ল্যাকটিক অ্যাসিড, ৩) গ - জারকীয় ডিকার্বক্সিলেশন, ৪) গ - গ্লাইকোলাইসিস, ৫) ক - ৩:১, ৬) ক - ৪, ৭) খ - ০ অণু, ৮) ঘ - অ্যাম্ফিবোলিক

ক্যাটাপ্লেরোটিক বিক্রিয়া কী ?

যে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রেবস চক্রের জৈব অ্যাসিড গুলি মূল চক্র থেকে বের হয়ে অন্য যৌগ গঠনে নিয়োজিত হয়, সেই বিক্রিয়াকে ক্যাটাপ্লেরোটিক বিক্রিয়া বলে।

এই বিক্রিয়ার ফলে ক্রেবস চক্রে অম্লের ঘনত্ব কমে যায়, এর ফলে ক্রেবস চক্রটি ব্যাহত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অ্যানাপ্লেরোটিক বিক্রিয়া কী ?

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন যৌগ থেকে অজৈব অম্ল উৎপন্ন হয়ে ক্রেবস চক্রে অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ করে তাকে অ্যানাপ্লেরোটিক বিক্রিয়া বলে।

শ্বসন অনুপাত কাকে বলে ?

শ্বসন কালে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের ঘনমান এবং গৃহীত অক্সিজেন গ্যাসের ঘনমানের অনুপাতকে শ্বসন অনুপাত বলে।

সবাত শ্বসনের RQ = একক সময়ে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ / একক সময়ে অক্সিজেন গ্ৰহণের পরিমাণ

 # RQ এর মান খাদ্যবস্তুর রাসায়নিক উপাদানের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। মধুমেহ বা ডায়াবেটিস রোগে RQ কমে যায়।


লুপ্ত বিন্দু কাকে বলে ?

বাতাসের অক্সিজেনের যে মাত্রায় কোনো বস্তুর শ্বসন অনুপাত ১ হয় তাকে লুপ্ত বিন্দু বলে।

ফারমেনটেশন কাকে বলে ?

যে পদ্ধতিতে অবায়বীয় জীবকোশের দ্বারা শ্বসন বস্তুর জারণ ঘটে তাকে ফারমেনটেশন বলে।

কোন পদ্ধতিতে ADP থেকে ATP উৎপাদন হয় ?

অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন পদ্ধতিতে ADP থেকে ATP উৎপন্ন হয়।

অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন এর অন্তিম পদার্থ কী ?

ATP এবং জল হলো অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন এর অন্তিম পদার্থ।


কেমন লাগছে আমাদের ওয়েবসাইট পড়তে অবশ্যই জানান নিজের কমেন্ট বক্সে আপনার কমেন্ট করে। শেয়ার করুন এই পেজটি অন্যান্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। পড়তে থাকুন দেখতে থাকুন আমাদের অন্যান্য লেখাগুলিও। অসংখ্য ধন্যবাদ।।



❤️ from Bigyanbook

বিজ্ঞানবুক

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন