প্রোক্যারিওটিক, মেসোক্যারিওটিক, ইউক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Prokaryotic, Mesokaryotic, Eukaryotic cell) - Bigyanbook
নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা প্রোক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য, মেসোক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য এবং ইউক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য জানবো। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক বৈশিষ্ট্য গুলি।
প্রোক্যারিওটিক কোশ (Prokaryotic cell)
• প্রোক্যারিওটিক কোশ কাকে বলে? (What is Prokaryotic cell?)
যেসব কোষে আদর্শ এবং সংগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না, কোশে পর্দা ঘেরা কোষ অঙ্গাণু থাকে না, ক্রোমোজোম গঠিত হয় না, তাদের আদি কোষ বা প্রোক্যারিওটিক কোষ বলে।
উদাহরণ, ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ সবুজ শৈবাল, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি।
প্রোক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Prokaryotic cell)
1. এই রকম কোশ আকারে খুব ক্ষুদ্র হয় (মাইকোপ্লাজমা 0.1μm - 0.25μm এবং ব্যাকটেরিয়া 0.2μm - 0.3μm)।
2. জনন বস্তুর বাইরে কোনো আবরণ থাকে না। DNA সহ কোশীয় অংশকে নিউক্লিওয়েড (Nucleoid) বলে বা জেনোফোর (Genophore) বলে।
3. এইরকম কোষের সাইটোপ্লাজম পর্দাবৃত কোষ অঙ্গাণু থাকে না।
4. এই প্রকার কোষের রাইবোজোম 70S প্রকৃতির। প্রোটোপ্লাজমে ইতস্তত ছড়ানো থাকে।
5. শ্বাস উৎসেচক সাইটোপ্লাজমে বা প্লাজমা পর্দার অন্তঃগাত্রে অবস্থান করে।
6. কোষ প্রাচীরের মুখ্য উপাদান মিউকোপেপটাইড বা পেপটাইডোগ্লাইক্যান।
7. সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক থাকলে তা থাইলাকয়েড বা ল্যামেলি নামক অঙ্গানুর মধ্যে অবস্থান করে। কারণ এই প্রকার কোশে প্লাস্টিড থাকে না।
8. অনেক সময় কোষ পর্দা ভাঁজ হয়ে মেসোজোম নামক অঙ্গাণু সৃষ্টি করে, যার মধ্যে শ্বাস উৎসেচক থাকে।
9. কোষে ক্রোমোজোম থাকে না এবং মাইটোটিক অ্যাপারেটাস গঠিত হয় না।
10. কোশে জনন বস্তুতে হিস্টোন জাতীয় ক্ষারীয় প্রোটিন থাকে না।
11. কোশে ভ্যাকুওল সৃষ্টি হয় না।
12. এইরকম কোষের সাইটোপ্লাজম এ কোনো রকম চলন দেখা যায় না।
মেসোক্যারিওটিক কোশ (Mesokaryotic cell)
• মেসোক্যারিওটিক কোশ কাকে বলে? (What is Mesokaryotic cell?)
যেসব কোষে নিউক্লিয়াস সংগঠিত এবং পর্দাঘেরা, ক্রোমোজোম আম্লিক প্রোটিন দিয়ে গঠিত এবং যাদের নিউক্লিয় বিভাজন অ্যামাইটোটিক প্রকৃতির এবং বিভাজন কালে নিউক্লিয় পর্দা বিলুপ্ত হয় না, তাদের মেসোক্যারিওটিক কোশ বলে।
উদাহরণ, পেরিডিনিয়াম, জিমনোডিনিয়াম ইত্যাদি।
মেসোক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Mesokaryotic cell)
1. নিউক্লিয়াস সংগঠিত এবং আবরণীবেষ্টিত।
2. ক্রোমোজোম থাকে যা কেবল আম্লিক প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
3. কোষ বিভাজন অ্যামাইটোটিক প্রকৃতির, কোষ বিভাজনের সময় নিউক্লিয় পর্দা বিলুপ্ত হয় না।
4. স্থির দশায় ক্রোমোজোম গুলি কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে।
5. ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার বিহীন।
6. কোষের কোষ পর্দা থাকে, কিন্তু কোষ প্রাচীর থাকে না। কোষ প্রাচীর এর পরিবর্তে থিকা বা পেলিকল থাকে।
7. রাইবোজোম 70S প্রকৃতির এবং সাইটোপ্লাজমে থাকে।
8. সেন্ট্রোজোম থাকে না।
9. ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে এবং সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক ক্লোরোপ্লাস্ট এর মধ্যে অবস্থান করে।
10. কোষের মধ্যে পর্দাবৃত কোষ অঙ্গাণু মাইটোকনড্রিয়া, প্লাস্টিড এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম থাকেনা।
ইউক্যারিওটিক কোশ (Eukaryotic cell)
• ইউক্যারিওটিক কোশ কাকে বলে? (What is Eukaryotic cell?)
যেসব কোষে নিউক্লিয়াস সংগঠিত (নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়জালক) এবং নিউক্লিয় পর্দাবেষ্টিত ক্রোমোজোম ক্ষারীয় প্রোটিন যুক্ত, কোশে পর্দা ঘেরা কোষ অঙ্গাণু থাকে, তাদের আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোষ বলে।
উদাহরণ, উন্নত উদ্ভিদ কোশ ও প্রাণী কোষ।
ইউক্যারিওটিক কোশের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Eukaryotic cell)
1. এই প্রকার কোষের নিউক্লিয়াস সংগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওপ্লাজম এবং নিউক্লিয় জালক উপস্থিত থাকে।
2. এই প্রকার কোষে পর্দা ঘেরা কোষ অঙ্গাণু, যেমন - মাইটোকনড্রিয়া, প্লাস্টিড, গলগি বডি, লাইসোজোম ইত্যাদি থাকে।
3. রাইবোজোম এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর গাত্রে, নিউক্লিয় পর্দা, মাইটোকনড্রিয়া, নিউক্লিওলাস এবং সাইটোপ্লাজমে মুক্তভাবে অবস্থান করে। রাইবোজোম 80S প্রকৃতির হয়।
4. শুধুমাত্র প্রাণী কোষে সেন্ট্রোজোম থাকে।
5. উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে ক্লোরোপ্লাস্ট এর মধ্যে সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক থাকে।
6. ক্রোমোজোমে ক্ষারীয় প্রোটিন উপস্থিত। ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। স্থির দশায় ক্রোমোজোম গুলি প্রসারিত অবস্থায় থাকে।
7. কোষ বিভাজনের সময় মাইটোটিক অ্যাপারেটাস গঠিত হয়।
8. শ্বাস উৎসেচক সাইটোপ্লাজম এবং মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে থাকে।
9. উদ্ভিদ কোষের ক্ষেত্রে কোষপ্রাচীর উপস্থিত যা প্রধানত সেলুলোজ দিয়ে গঠিত হয়।
10. উদ্ভিদ কোষে ভ্যাকুওল থাকে। প্রাণী কোষেরষ সাধারণত থাকেনা।
আরো বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য বিজ্ঞান বুক ফলো করতে থাকুন। পড়তে থাকুন বিজ্ঞান বুকের অন্যান্য আর্টিকেল গুলি। শেয়ার করুন বিজ্ঞান বুকের এই আর্টিকেলটি। আপনার আত্মীয়-পরিজন বন্ধুদেরকে বিজ্ঞান বুকের বিষয়ে জানান এবং তাদেরকে বিজ্ঞান বুক পড়তে বলুন। সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞান বুক ইউটিউব এ। লাইক এবং ফলো করুন বিজ্ঞান বুক ফেসবুকে।
বিজ্ঞান বুক হলো বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম ওয়েবসাইট। দেখতে থাকুন বিজ্ঞান বুক। আরো অনেক বেশি তথ্য জানার জন্য। শেয়ার করুন বিজ্ঞান বুক এর প্রতিটি আর্টিকেল আপনার আত্মীয়-পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে। ধন্যবাদ।।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন