নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞান বুকে। এই আর্টিকেলে আমরা অক্সিন হরমোন সম্পর্কে জানবো এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই কিছু প্রশ্ন-উত্তর জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
অক্সিন হলো উদ্ভিদ দেহের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন। অর্থাৎ, এই হরমোন উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। অক্সিন হরমোন হেটেরো-অক্সিন (Heteroauxin) নামেও পরিচিত। এই হরমোনের রাসায়নিক নাম ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (Indole Acetic Acid বা IAA)।
অক্সিন কাকে বলে ? বা অক্সিনের সংজ্ঞা লেখো।
উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রভাগ, মুকুলাবরণী, বর্ধনশীল পাতার কোশ ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন নাইট্রোজেন যুক্ত জৈব অ্যাসিড উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের একসঙ্গে অক্সিন বলে।
অক্সিনের উৎসস্থল কোথায় ? বা অক্সিন কোথায় উৎপন্ন হয় ? (What is the site of auxin formation ?)
অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাজক কলায়, বিশেষ করে কাণ্ডের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুলাবরণী বা কোলিওপটাইল, ভ্রূণ ও কচি পাতা বা বর্ধনশীল পাতার কোষে উৎপন্ন হয়।
অক্সিনের কাজ (Functions of Auxin)
১) বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ : অক্সিন হরমোন প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও অক্সিনের প্রভাবে —
(ক) উদ্ভিদ কোশ বিভাজিত হয়, (খ) কোশ আয়তনের প্রসারিত হয়, (গ) ক্যাম্বিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, (ঘ) কাক্ষিক মুকুল এর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে অগ্রমুকুল এর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, ফলে উদ্ভিদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে।
২) ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ : অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের ফটোট্রপিক এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অক্সিন আলোর উৎসের বিপরীত দিকে বেশি মাত্রায় সঞ্চিত হয়ে ওই অঞ্চলের কোষগুলির দ্রুত বিভাজন ঘটায়, এর ফলে উদ্ভিদের কান্ড আলোর উৎসের দিকে বেঁকে যায়। উদ্ভিদের মূল স্বল্প অক্সিনে বেশি অনুভূতিশীল হওয়ায় আলোর উৎসের দিকের কোষগুলি দ্রুত বিভাজিত হয়, ফলে মূল আলোর উৎসের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়।
৩) অঙ্গমোচন রোধ : অক্সিন উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গের অকাল পতন রোধ করে। উদ্ভিদের এই অপরিণত অঙ্গগুলির উদাহরণ হলো, পাতা, মুকুল, ফুল, ফল ইত্যাদি।
৪) অঙ্গবিভেদ নিয়ন্ত্রণ : লঘু ঘনত্বের অক্সিন হরমোন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গের, যেমন: মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদির পরিস্ফুরণ ঘটায়। এইভাবে অক্সিন উদ্ভিদের ফল ও বীজ গঠনে সাহায্য করে।
৫) ফলের পরিস্ফুটন : অক্সিন হরমোনের প্রভাবে নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয়টি ফলে পরিণত হয়। এর ফলে বীজহীন ফল সৃষ্টি হয়। অক্সিন এর প্রভাবে নিষেক ছাড়াই বীজবিহীন ফল সৃষ্টি হওয়ার পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে।
৬) উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণ : উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
অক্সিনের ব্যবহারিক প্রয়োগ
১) বীজবিহীন ফল উৎপাদন : বীজবিহীন ফল (টমেটো, বেগুন, লঙ্কা, লাউ, কুমড়ো, পেঁপে, তরমুজ ইত্যাদি) উৎপাদনের জন্য অক্সিন হরমোনের প্রয়োগ করা হয়।
২) কলম তৈরি : শাখা কলম এর সাহায্যে বংশ বিস্তারের জন্য নানান রকম ফুল ও ফলের গাছে অক্সিন প্রয়োগ করে দ্রুত মুকুল সৃষ্টি করা হয়।
৩) আগাছা দমন : চাষের খেতে আগাছা দমনের জন্য কৃত্রিম অক্সিন হরমোন (2,4-D) ব্যবহার করা হয়।
৪) অকাল পতন রোধ : পাতা, ফুল ও ফলের মোচন অর্থাৎ ঝরে পড়া রোধ করার জন্য কৃত্রিম অক্সিন হরমোনের প্রয়োগ করা হয়।
৫) ক্ষত নিরাময় : উদ্ভিদ অঙ্গ (প্রধানত ডালপালা) ছাঁটার পর ওই অঞ্চলের ক্ষতস্থান পূরণের জন্য কৃত্রিম অক্সিন হরমোনের ব্যবহার করা হয়।
অক্সিনের রাসায়নিক নাম কি ?
অক্সিনের রাসায়নিক নাম ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড বা IAA ।
প্রাকৃতিক হরমোন কাকে বলে ? (What is natural hormone ?)
যে সমস্ত হরমোন উদ্ভিদ দেহে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয় তাদেরকে প্রাকৃতিক হরমোন বলে।
প্রাকৃতিক হরমোনের উদাহরণ লেখো।
অক্সিন, জিব্বেরেলিন, কাইনিন ইত্যাদি হলো প্রাকৃতিক হরমোন এর উদাহরণ।
কৃত্রিম হরমোন কাকে বলে ? (What is synthetic hormone ?)
গবেষণাগারে প্রস্তুত যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রাকৃতিক হরমোনের মতো উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনে সাহায্য করে তাদের কৃত্রিম হরমোন বলে।
কৃত্রিম হরমোনের উদাহরণ লেখো।
ইনডোল প্রোপানয়িক অ্যাসিড (IPA), 2,4-ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA), ডাইক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (2,4-D), ইনডোল বিউটাইরিক অ্যাসিড (IBA), -2,4-5 ট্রাইক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (2, 4-5 T), মিথাইল ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (MCPA), ইনডোল অ্যাসিটালডিহাইড (IALD) ইত্যাদি।
ধন্যবাদ আপনাকে বিজ্ঞানবুক পড়ার জন্য, পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক, ফলো করুন বিজ্ঞানবুক সোশ্যাল মিডিয়াতে, শেয়ার করুন বিজ্ঞানবুকের আর্টিকেলগুলি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে, ধন্যবাদ।।