নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
মানুষের ৪৬ টি ক্রোমোজোমের মধ্যে ৪৪ টি অটোজোম এবং ২ টি সেক্স ক্রোমোজোম থাকে।
মানুষের এই ক্রোমোজোমের সংখ্যার পরিবর্তনজনিত কারণে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম (Klinefelter's Syndrome) দেখা যায়।
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম কী? ( What is Klinefelter's Syndrome? )
এই ধরনের অস্বাভাবিকতায় একজন পুরুষ মানুষের মধ্যে কিছু কিছু স্ত্রী চরিত্রের প্রকাশ ঘটে এবং এই রোগে আক্রান্ত মানুষেরা জনন কাজে অসফল হয়।
পপুলেশন বা জনসংখ্যায় প্রায় ৫০০ নবাগত শিশুর মধ্যে একজনের এই ধরনের অস্বাভাবিকতায় দেখা যায়।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে H.F. Klinefelter এই সিন্ড্রোমের ক্রোমোজোমগত ভিত্তি সম্পর্কে সর্বপ্রথম আলোকপাত করেন।
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের লক্ষণ ( Symptoms of Klinefelter's Syndrome )
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে মানুষের যে অবয়বগত লক্ষণ বা অস্বাভাবিকতা দেখা যায় সেগুলি হলো —
১) শীর্ণ লম্বা গড়নবিশিষ্ট পুরুষ।
২) দেহের নিম্ন ভাগ তুলনামূলক ভাবে অনেক দীর্ঘ হয়।
৩) গোঁফ দাড়ি অল্প।
৪) মহিলাদের মতো স্তনের বৃদ্ধি দেখা যায় বা গাইন্যকোম্যাস্টিয়া দেখা যায়।
৫) গলার স্বর তীক্ষ্ণ এবং উচ্চ কম্পাঙ্কের হয়।
৬) শুক্রাশয় ক্ষুদ্রাকৃতির হয় এবং স্বভাবতই জনন ক্ষমতা কম হয়।
৭) দেহকোশে বারবডি (Barr Body) বা সেক্স ক্রোমাটিন দেখা যায়।
৮) টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ হ্রাস পায়, ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। (টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, এটি পুরুষ দেহে ক্ষরিত হয় এবং ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, এটি নারীদেহে ক্ষরিত হয়)
৯) হাত পা লম্বা হয়।
১০) কখনো কখনো দৃষ্টি শক্তির অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।
১১) বিভিন্ন ধরনের মানসিক বিকাশ ঘটে না। যেমন, I.Q. কম, দেরিতে কথা বলা, মানসিক দৌর্বল্য, চেষ্টীয় সমন্বয় দুর্বল প্রকৃতির হয়।
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের কারণ ( Cause of Klinefelter's Syndrome )
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের জন্য মানুষের ক্রোমোজোমের সংখ্যাজনিত ত্রুটিকে দায়ী করা হয়। এই সিন্ড্রোমে ক্রোমোজোম বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আক্রান্ত মানুষের দেহকোশে ৪৬ টি ক্রোমোজোমের পরিবর্তে ৪৭ টি ক্রোমোজোম থাকে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি X -ক্রোমোজোম থাকে।
পুরুষের স্বাভাবিক X -ক্রোমোজোমের সমন্বয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত একটি X -ক্রোমোজোম থাকলে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম দেখা যায়।
এই কারণে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের ক্রোমোজোমগত সমন্বয় ৪৭, একে 47 XXY রূপে চিহ্নিত করা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই সিন্ড্রোম সেক্স ক্রোমোজোমের জন্য একপ্রকার ট্রাইসোমি (Trisomy)।
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে অটোজোমগত সমন্বয়ে কোনো ত্রুটি থাকে না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৪৭ টি ক্রোমোজোম দেখা যায়, যেখানে ৪৪ টি অটোজোম থাকে এবং ৩ টি সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। তবে X -ক্রোমোজোমের সংখ্যা এক এর বেশি হলে, সেক্ষেত্রে মোট ক্রোমোজোম সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৪৮ বা ৪৯ বা তার বেশি। পুরুষ দেহকোশে একটি বাদে অতিরিক্ত X -ক্রোমোজোমগুলি সেক্স ক্রোমাটিন বা বার বডি হিসেবে দেখা যায়।
চিত্র : ক্রোমোজোমের ননডিসজাংশন ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের সৃষ্টি |
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের উৎপত্তি ( Origin of Klinefelter's Syndrome )
মানুষের ক্ষেত্রে কোনো জাইগোট যদি 47 XXY -ক্রোমোজোম সমন্বয়যুক্ত হয়, তাহলে সেই জাইগোট থেকে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম বিশিষ্ট সন্তান জন্মগ্ৰহণ করে।
ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে XXY -ক্রোমোজোম সৃষ্টির জন্য দুটি সম্ভাবনা উল্লেখ করা যায়।
প্রথম সম্ভাবনা : এই সম্ভাবনার ক্ষেত্রে জাইগোটপূর্ব অবস্থা বা প্রি-জাইগোটিক কনডিশনকে (Pre-zygotic Condition) দায়ী করা হয়। এই ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক গ্যামেট সৃষ্টির মাধ্যমে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম দেখা দিতে পারে। পুরুষদেহে গ্যামেট সৃষ্টির সময় সেক্স ক্রোমোজোমের ননডিসজাংশনজনিত কারণে কোনো গ্যামেট XY ক্রোমোজোম যুক্ত হতে পারে (স্বাভাবিক ভাবে একটি পুরুষ গ্যামেটে একটি X ক্রোমোজোম অথবা একটি Y ক্রোমোজোম থাকে)। এমন পুং গ্যামেট স্বাভাবিক স্ত্রী গ্যামেটকে নিষিক্ত করলে XXY -ক্রোমোজোমযুক্ত জাইগোট সৃষ্টি হতে পারে। অনুরূপভাবে স্ত্রীদেহে গ্যামেট সৃষ্টির সময় সেক্স ক্রোমোজোমের ননডিসজাংশনজনিত কারণে কোনো স্ত্রী গ্যামেট XX ক্রোমোজোম যুক্ত হয় (স্বাভাবিক ভাবে একটি স্ত্রী গ্যামেটে একটি X -ক্রোমোজোম থাকে)। এমন স্ত্রী গ্যামেট স্বাভাবিক Y -ক্রোমোজোমবিশিষ্ট পুং গ্যামেটকে নিষিক্ত করলে XXY জাইগোট সৃষ্টি হতে পারে এবং এর ফলে ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমবিশিষ্ট সন্তানের হয়।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা : এই সম্ভাবনার ক্ষেত্রে জাইগোট সৃষ্টির পরবর্তী অবস্থা বা পোস্ট-জাইগোটিক কনডিশন (Post-zygotic Condition) ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের জন্য দায়ী হতে পারে। স্বাভাবিক XY -ক্রোমোজোমযুক্ত জাইগোট ক্লিভেজ বিভাজনের সময় অসম ক্রোমোজোম বন্টনের ফলে একটি XXY -ক্রোমোজোমযুক্ত ব্লাস্টোমিয়ার তৈরি করতে পারে, এক্ষেত্রে অপর ব্লাস্টোমিয়ারটি শুধু Y -ক্রোমোজোমযুক্ত হয় যে কারণে এই কোশটি বাঁচেনা। ফলে XXY -ক্রোমোজোমযুক্ত ব্লাস্টোমিয়ার পরিস্ফুরণ লাভ করে এবং ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমবিশিষ্ট পুরুষ তৈরি হয়।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিজ্ঞানবুক পড়ার জন্য।
এভাবেই পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।
ফলো করুন বিজ্ঞানবুক ফেসবুক, টুইটারে।
এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ারও করতে পারেন।
সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞানবুক ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপনি পাবেন বিভিন্ন বিষয়ের উপর পডকাস্ট বা অডিওবুক। এছাড়াও আপনি আরো অনেক আপডেট পাবেন।
ফলো করুন বিজ্ঞানবুক গুগল নিউজে। একেবারে উপরের দিকে গুগল নিউজের লিংক দেওয়া আছে।
আবারও আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পড়তে থাকুন, দেখতে থাকুন বিজ্ঞানবুক।