নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে জানবো অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা।
• অপুংজনি কাকে বলে? বা পার্থেনোজেনেসিস কাকে বলে? (What is parthenogenesis?)
উত্তর - যে জনন পদ্ধতিতে অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সরাসরি অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস বলে।
এই হলো অপুংজনির সংজ্ঞা। অনিষিক্ত ডিম্বাণু মানে যে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় না বা নিষেক বা ফার্টিলাইজেশন (Fertilization) ঘটে না।
অপুংজনির উদাহরণ (Parthenogenesis example)
কিছু নিম্নশ্রেণীর প্রাণী যেমন, মৌমাছি, বোলতা ইত্যাদি এবং কিছু নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদ যেমন, মিউকর, স্পাইরোগাইরা ইত্যাদিতে অপুংজনি দেখা যায়।
এছাড়াও অনেক সময় হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে আপেল, আঙুর, কলা প্রভৃতি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয়ের পরিস্ফুটন ঘটিয়ে বীজহীন ফল তৈরি করা হয়, এই বীজহীন ফলকে পার্থেনোকার্পিক ফল (parthenocarpic fruit) বলে এবং যে পদ্ধতির মাধ্যমে এই পার্থেনোকার্পিক ফলের উৎপাদন করা হয় সেই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি (parthenocarpy) বলে।
• পার্থেনোকার্পি কাকে বলে?
উত্তর - যে পদ্ধতিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে আপেল, আঙুর, কলা প্রভৃতি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয়ের পরিস্ফুটন ঘটিয়ে বীজহীন ফল তৈরি করা হয়, তাকে পার্থেনোকার্পি বলে।
• পার্থেনোকার্পিক ফল কাকে বলে?
উত্তর - হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে আপেল, আঙুর, কলা প্রভৃতি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয়ের পরিস্ফুটন ঘটিয়ে বীজহীন ফল তৈরি করা হয়, এই বীজহীন ফলকে পার্থেনোকার্পিক ফল বলে।
এবারে দেখবো অপুংজনির বিভিন্ন প্রকারভেদ।
অপুংজনির প্রকারভেদ | Types of Parthenogenesis
অপুংজনি দুপ্রকারের দেখা যায়, প্রাকৃতিক অপুংজনি এবং কৃত্রিম অপুংজনি। আবার, প্রাকৃতিক অপুংজনির বিভিন্ন ভাগ আছে। সেগুলিও দেখে নেবো।
• প্রাকৃতিক অপুংজনি | Natural Parthenogenesis
প্রাকৃতিক অপুংজনি অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভাবে, প্রাকৃতিক পরিবেশে, কোনো রকম বাহ্যিক শর্ত ছাড়াই, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবেই যে অপুংজনি ঘটে তাকে প্রাকৃতিক অপুংজনি বলে।
প্রাকৃতিক অপুংজনি আবার দুপ্রকারের হয়, সম্পূর্ণ অপুংজনি এবং অসম্পূর্ণ অপুংজনি।
১) সম্পূর্ণ অপুংজনি (Complete Parthenogenesis)
কিছু পতঙ্গ বা ইনসেক্ট আছে যাদের পুরুষ প্রাণী নেই। এই সমস্ত প্রাণীদের শুধু মাত্র অপুংজনি পদ্ধতির মাধ্যমেই বংশবিস্তার ঘটে। এরকম অপুংজনি পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ অপুংজনি বা অবলিগেটরি অপুংজনি (Obligatory Parthenogenesis) বলে।
উদাহরণ : কেঁচোর কয়েকটি প্রজাতি, রটিফার, ঘাস ফড়িং, মথ, প্লাজমিড, কয়েক প্রকারের মাছ, স্যালামান্ডার, গিরগিটি ইত্যাদি পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে।
২) অসম্পূর্ণ অপুংজনি (Incomplete Parthenogenesis)
কোনো কোনো পতঙ্গের জীবনচক্রে দুটি জনু দেখা যায়, যেমন, যৌন জনু এবং অপুংজনি। এই ক্ষেত্রে ডিপ্লয়েড ডিম্বাণু থেকে স্ত্রী প্রাণী সৃষ্টি হয় এবং অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে পুরুষ প্রাণী সৃষ্টি হয়। এই ধরনের অপুংজনিকে অসম্পূর্ণ অপুংজনি বলে।
এদের জীবনচক্রে দুটি জনু, যৌন জনু (s) এবং অপুংজনি (p) পর্যায়ক্রমে ঘটে।
যেমন —
গল মাছির (Neuroptera ) জীবনচক্রে বছরে পর্যায়ক্রমে একবার s দশা এবং একবার p দশা আসে।
অ্যাফিড, রটিফার ইত্যাদি প্রাণীদের গ্রীষ্মকালে একাধিকবার জনু পরিবর্তীত হয়।
সম্পূর্ণ অপুংজনি এবং অসম্পূর্ণ অপুংজনি ছাড়াও প্রাকৃতিক অপুংজনি হ্যাপ্লয়েড এবং ডিপ্লয়েড প্রকৃতির হয়। দেখে নেওয়া যাক।
১) হ্যাপ্লয়েড অপুংজনি (Haploid Parthenogenesis)
যখন অনিষিক্ত হ্যাপ্লয়েড ডিম্বাণু থেকে সরাসরি অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে হ্যাপ্লয়েড অপুংজনি বলে। উদাহরণ : স্পাইরোগাইরা, মিউকর, বোলতা, মৌমাছি, পিঁপড়ে ইত্যাদি।
২) ডিপ্লয়েড অপুংজনি (Diploid Parthenogenesis)
যখন অনিষিক্ত ডিপ্লয়েড ডিম্বাণু থেকে সরাসরি অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে ডিপ্লয়েড অপুংজনি বলে। উদাহরণ : ডাফনিয়া, নেমারটিস প্রভৃতি জীব।
• কৃত্রিম অপুংজনি | Artificial Parthenogenesis
কৃত্রিম উপায়ে তাপমাত্রার পরিবর্তন করে, রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে, বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটিয়ে, যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইত্যাদি পদ্ধতির দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হবার পূর্বেই অপত্য সৃষ্টি করাকে কৃত্রিম অপুংজনি বলে।
উদাহরণ : অ্যানিলিডা, মোলাস্কা, উভচর, পক্ষী প্রভৃতি প্রাণীদের ক্ষেত্রে কৃত্রিম অপুংজনি দেখা যায়।
এবারে দেখে নেওয়া যাক এই কৃত্রিম অপুংজনির কিছু ভৌত উদ্দীপক এবং কিছু রাসায়নিক উদ্দীপক।
» ভৌত উদ্দীপক : (i) ডিম্বাণুকে 30°C তাপমাত্রা থেকে 0°-10°C তাপমাত্রায় স্থানান্তরিত করলে অর্থাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটালে অপুংজনি ঘটে। (ii) বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটিয়ে অপুংজনি ঘটানো হয়। (iii) যদি ডিম্বাণুকে সূক্ষ্ম কাচ-নিডল দিয়ে খোঁচা দেওয়া হয় তখন অপুংজনি ঘটে।
» রাসায়নিক উদ্দীপক : (i) ক্লোরোফর্ম, (ii) অতিসারক ও লঘুসারক সমুদ্রের জল, (iii) বিভিন্ন ক্লোরাইড যেমন, K+, Ca++, Na+, Mg++ ইত্যাদি, (iv) বিভিন্ন অ্যাসিড যেমন, ল্যাকটিক অ্যাসিড, বিউটারিক অ্যাসিড, (v) ইউরিয়া, সুক্রোজ ইত্যাদি।
এবারে দেখবো অপুংজনি জনন প্রক্রিয়ার তাৎপর্য কী বা গুরুত্ব। দেখে নেওয়া যাক।
অপুংজনি জননের তাৎপর্য (Importance of Parthenogenesis)
১) অপুংজনি জনন পদ্ধতিতে মৌমাছি, বোলতা প্রভৃতি পতঙ্গের লিঙ্গ নির্ধারণ হয়।
২) যৌন জননের মতো এই জনন প্রক্রিয়াটিতে কোনো জটিল প্রক্রিয়া নেই।
৩) এই জনন পদ্ধতির ক্ষেত্রে নিষেকের কোনো প্রয়োজন নেই।
৪) প্রাকৃতিক ভাবে ছাড়াও কোনো বহিস্থ উদ্দীপকের সাহায্যে কৃত্রিম ভাবে অপুংজনি ঘটানো সম্ভব।
৫) অপুংজনি একটি সহজ, সরল, সুবিধাজনক জনন পদ্ধতি।
৬) এই জনন পদ্ধতিতে জিনের পুনঃ সংযুক্তি ও প্রকরণ ঘটে না, তার জন্য নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় না।
এবার দেখে নেবো অপুংজনি এবং যৌন জননের পার্থক্য।
অপুংজনি ও যৌন জননের পার্থক্য (Difference between Parthenogenesis and Sexual Reproduction)
১) অপুংজনি : নিষেকের প্রয়োজন হয় না।
যৌন জনন : নিষেকের প্রয়োজন হয়।
২) অপুংজনি : পুং গ্যামেটের প্রয়োজন হয় না।
যৌন জনন : পুং গ্যামেট এবং স্ত্রী গ্যামেট উভয়ের প্রয়োজন হয়।
৩) অপুংজনি : অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সরাসরি অপত্য জীব সৃষ্টি হয়।
যৌন জনন : নিষেকের ফলে ডিপ্লয়েড জাইগোট থেকে পরিণত অপত্য জীব সৃষ্টি হয়।
৪) অপুংজনি : অপত্য জীবের মধ্যে শুধুমাত্র মাতৃ -র চারিত্রিক গুণাবলী পরিলক্ষিত হয়।
যৌন জনন : অপত্য জীবের মধ্যে পিতৃ এবং মাতৃ উভয়ের চারিত্রিক গুণাবলী পরিলক্ষিত হয়।
Random Questions and Answers
• কৃত্রিম অপুংজনি কাকে বলে?
উত্তর - কৃত্রিম উপায়ে তাপমাত্রার পরিবর্তন করে, রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে, বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটিয়ে, যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইত্যাদি পদ্ধতির দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হবার পূর্বেই অপত্য সৃষ্টি করাকে কৃত্রিম অপুংজনি বলে।
• প্রাকৃতিক অপুংজনি কাকে বলে?
উত্তর - প্রাকৃতিক অপুংজনি অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভাবে, প্রাকৃতিক পরিবেশে, কোনো রকম বাহ্যিক শর্ত ছাড়াই, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবেই যে অপুংজনি ঘটে তাকে প্রাকৃতিক অপুংজনি বলে।
• নিওটেনি কাকে বলে?
উত্তর - লার্ভা দশায় যৌনতার পূর্ণতাপ্রাপ্তিকে নিওটেনি বলে।
• কৃত্রিম অপুংজনির দুটি রাসায়নিক উদ্দীপকের নাম লেখো।
উত্তর - কৃত্রিম অপুংজনির দুটি রাসায়নিক উদ্দীপকের নাম হলো, ক্লোরোফর্ম ও ল্যাকটিক অ্যাসিড।
আরো বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানার জন্য বিজ্ঞান বুক ফলো করতে থাকুন। পড়তে থাকুন বিজ্ঞান বুকের অন্যান্য আর্টিকেল গুলি। শেয়ার করুন বিজ্ঞান বুকের এই আর্টিকেলটি। আপনার আত্মীয়-পরিজন বন্ধুদেরকে বিজ্ঞান বুকের বিষয়ে জানান এবং তাদেরকে বিজ্ঞান বুক পড়তে বলুন। সাবস্ক্রাইব করুন বিজ্ঞান বুক ইউটিউব এ। লাইক এবং ফলো করুন বিজ্ঞান বুক ফেসবুকে।
বিজ্ঞান বুক হলো বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম ওয়েবসাইট। দেখতে থাকুন বিজ্ঞান বুক। আরো অনেক বেশি তথ্য জানার জন্য। শেয়ার করুন বিজ্ঞান বুক এর প্রতিটি আর্টিকেল আপনার আত্মীয়-পরিজন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে। ধন্যবাদ।।