মাইক্রোস্পোরোজেনেসিস : সংজ্ঞা, পদ্ধতি, প্রশ্ন উত্তর | Microsporogenesis

নমস্কার স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে মাইক্রোস্পোরোজেনেসিস বা পুং রেণুর উৎপত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

www.bigyanbook.co.in


প্রথমেই দেখবো মাইক্রোস্পোরোজেনেসিস কি বা এর সংজ্ঞা।

সংজ্ঞা: যে প্রক্রিয়ায় রেনুধর কলায় অবস্থিত রেনু মাতৃকোষ থেকে পরাগরেণু বা পোলেন গ্রেন (pollen grains) সৃষ্টি হয় তাকে মাইক্রোস্পোরোজেনেসিস বলে।

রেণুস্থলী এর মধ্যে থাকা রেনুধর কলা বারবার বিভাজিত হয়ে রেনু মাতৃকোষ গঠন করে। এই রেনু মাতৃকোষ গুলি ডিপ্লয়েড (2n) হয়। ডিপ্লয়েড রেনু মাতৃকোষ মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় এবং হ্যাপ্লয়েড (n) মাইক্রোস্পোর বা পরাগরেণু গঠন করে। একটি রেনু মাতৃকোষ থেকে মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় চারটি পরাগরেণু সৃষ্টি হয়। উৎপন্ন পরাগরেণু গুলি একটি আবরণ এর মধ্যে একত্রিত ভাবে থাকে এই জন্য এদের রেনুচতুষ্টয় (spore tetrad) বলে। এই রেনু চতুষ্টয় এর থেকে প্রতিটি রেনু পৃথক হয়ে বৃদ্ধি পায়। Aristolochia elegans নামের এক প্রজাতিতে পাঁচ রকমের পরাগরেণু দেখা যায়, যেগুলি হলো টেট্রাহেড্রাল (tetrahedral), আইসোবাইল্যাটারাল (isobilateral), ডেকাসেট (decussate), লিনিয়ার (linear) এবং T-আকৃতিবিশিষ্ট। এই রেনু চতুষ্টয় থেকে চারটি রেনু গঠিত হয়।

আরও পড়ুন : রেচন — প্রশ্ন-উত্তর


• পরাগধানীর বিদারণ (Dehiscence of Anther)

পরাগধানীর প্রতিটি খন্ডে দুটি করে পরাগথলি থাকে। যখন কোনো পরিণত পরাগধানী শুকিয়ে যেতে থাকে তখন পরাগধানীর প্রতি খন্ডকের দুটি পরাগথলি একটি গহবর বা থিকা theca) গঠন করে। অর্থাৎ পরাগধানী তে দুটি থিকা গঠিত হয়। জল বিদারণের মাধ্যমে এন্ডোথেসিয়াম সংকুচিত হয়ে স্টেমিয়াম স্থানে বিদীর্ণ হয়ে যায় এবং তখন পরাগরেণু গুলি বাতাসে মুক্ত হয়।

আরও পড়ুন : DNA ও RNA এর পার্থক্য


• পরাগরেণুর গঠন (structure of pollen grain)

পরাগরেণু গুলি সাধারণত গোলাকার আকৃতির হয় তবে ডিম্বাকার অথবা ত্রিভুজ আকার ও হতে পারে। পরাগরেণু এককোশী হয়, এর কোষের মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। পরাগরেণুর কোশের সাইটোপ্লাজমে শ্বেতসার এবং অসম্পৃক্ত তেল থাকে। এই তেল ক্রোমোজোম গুলিকে বিকিরণের থেকে রক্ষা করে।


পরাগরেণুর প্রাচীরকে স্পোরোডার্ম (sporoderm) বলে। পরাগরেণুর প্রাচীর দুটি স্তরে বিভক্ত, যথা - বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন (exine) এবং অন্তঃপ্রাচীর বা ইনটাইন (intine)।

অন্তঃপ্রাচীর বা ইনটাইন পেক্টো-সেলুলোজিক (pecto-cellulosic) প্রকৃতির, অর্থাৎ পেকটিন এবং সেলুলোজ দ্বারা অন্তঃপ্রাচীর গঠিত। বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন ফ্যাটি পদার্থ স্পোরোপোলেনিন (sporopollenin) দিয়ে গঠিত। ফ্যাটি পদার্থের সঙ্গে প্রোটিন উপাদান ও থাকে। এই বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন দুটি অংশে বিভক্ত যথা, বাইরের দিকে অবস্থিত সেক্সাইন (sexine) বা একটেক্সাইন (ectexine) এবং ভিতরের দিকে অবস্থিত নেক্সাইন (nexine) বা এনডেক্সাইন (endexine) ।


পরাগরেণু বিভিন্ন আয়তনের হতে পারে যেমন অতি ক্ষুদ্র এবং বড় আয়তনের হয়। পরাগরেণুর গড় মাপ 10-17μ হয়। প্রতিটি পরাগরেণুর বহিঃ প্রাচীরে এক বা একাধিক রন্ধ্র থাকে, এদের রেনুরন্ধ্র (germ pores) বা জার্মিনাল ফারো (germinal furrows) বলে। এই রন্ধ্র গুলির মধ্য দিয়ে পরাগনালির নির্গমণ ঘটে।


পতঙ্গ পরাগী ফুলের পরাগরেণুর এক্সাইনের বাইরের দিকে যে হলুদ, চটচটে এবং তৈলাক্ত পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে তাকে পোলেনকিট (pollenkitt) বলে।

পোলেনকিট প্রধানত লিপিড এবং ক্যারোটিনয়েড দিয়ে গঠিত।

আরও পড়ুন : অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন এর পার্থক্য


এবার কিছু প্রশ্ন উত্তর দেখা যাক !!


১) স্পোরোডার্মের অন্তঃপ্রাচীর কী দিয়ে গঠিত?

উত্তর : স্পোরোডার্মের অন্তঃপ্রাচীর বা ইনটাইন পেক্টো-সেলুলোজিক (pecto-cellulosic) প্রকৃতির, অর্থাৎ পেকটিন এবং সেলুলোজ দ্বারা অন্তঃপ্রাচীর গঠিত।


২) স্পোরোডার্মের বহিঃপ্রাচীর কী দিয়ে গঠিত?

উত্তর : স্পোরোডার্মের বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন ফ্যাটি পদার্থ স্পোরোপোলেনিন (sporopollenin) দিয়ে গঠিত। ফ্যাটি পদার্থের সঙ্গে প্রোটিন উপাদান ও থাকে।


৩) জার্মিনাল ফারো কী?

উত্তর : প্রতিটি পরাগরেণুর বহিঃ প্রাচীরে এক বা একাধিক রন্ধ্র থাকে, এদের রেনুরন্ধ্র (germ pores) বা জার্মিনাল ফারো (germinal furrows) বলে। এই রন্ধ্র গুলির মধ্য দিয়ে পরাগনালির নির্গমণ ঘটে।


৪) পরাগরেণুর কীভাবে মুক্তি ঘটে?

উত্তর : পরাগধানীর প্রতিটি খন্ডে দুটি করে পরাগথলি থাকে। যখন কোনো পরিণত পরাগধানী শুকিয়ে যেতে থাকে তখন পরাগধানীর প্রতি খন্ডকের দুটি পরাগথলি একটি গহবর বা থিকা theca) গঠন করে। অর্থাৎ পরাগধানী তে দুটি থিকা গঠিত হয়। জল বিদারণের মাধ্যমে এন্ডোথেসিয়াম সংকুচিত হয়ে স্টেমিয়াম স্থানে বিদীর্ণ হয়ে যায় এবং তখন পরাগরেণু গুলি বাতাসে মুক্ত হয়।


৫) রেণুচতুষ্টয় কাকে বলে?

উত্তর : রেনু মাতৃকোষ থেকে মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় চারটি পরাগরেণু সৃষ্টি হয়। উৎপন্ন পরাগরেণু গুলি একটি আবরণ এর মধ্যে একত্রিত ভাবে থাকে এই জন্য এদের রেনুচতুষ্টয় (spore tetrad) বলে।


৬) পোলেন কিট কী?

উত্তর : পোলেন কিট হলো পতঙ্গ পরাগী ফুলের পরাগধানীর ট্যাপেটাম থেকে নিঃসৃত চটচটে তৈলাক্ত পদার্থ যা পরাগরেণু কে আবৃত করে রাখে এবং পরাগরেণুর বর্ণ, গন্ধ সৃষ্টি করে।


৭) পরাগধানীর কীভাবে ঘটে?

উত্তর : পরাগধানীর প্রতিটি খন্ডে দুটি করে পরাগথলি থাকে। যখন কোনো পরিণত পরাগধানী শুকিয়ে যেতে থাকে তখন পরাগধানীর প্রতি খন্ডকের দুটি পরাগথলি একটি গহবর বা থিকা theca) গঠন করে। অর্থাৎ পরাগধানী তে দুটি থিকা গঠিত হয়। জল বিদারণের মাধ্যমে এন্ডোথেসিয়াম সংকুচিত হয়ে স্টেমিয়াম স্থানে বিদীর্ণ হয়ে যায় এবং তখন পরাগরেণু গুলি বাতাসে মুক্ত হয়।


৮) স্পোরোডার্মের বহিঃপ্রাচীরের নাম কী এবং এটি কয় ভাগে বিভক্ত?

উত্তর : স্পোরোডার্মের বহিঃপ্রাচীরের নাম এক্সাইন। বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন দুটি অংশে বিভক্ত যথা, বাইরের দিকে অবস্থিত সেক্সাইন (sexine) বা একটেক্সাইন (ectexine) এবং ভিতরের দিকে অবস্থিত নেক্সাইন (nexine) বা এনডেক্সাইন (endexine) ।


৯) পরাগরেণুর গঠন বর্ণনা করো।

উত্তর : পরাগরেণু গুলি সাধারণত গোলাকার আকৃতির হয় তবে ডিম্বাকার অথবা ত্রিভুজ আকার ও হতে পারে। পরাগরেণু এককোশী হয়, এর কোষের মধ্যে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। পরাগরেণুর কোশের সাইটোপ্লাজমে শ্বেতসার এবং অসম্পৃক্ত তেল থাকে। এই তেল ক্রোমোজোম গুলিকে বিকিরণের থেকে রক্ষা করে।

পরাগরেণুর প্রাচীরকে স্পোরোডার্ম (sporoderm) বলে। পরাগরেণুর প্রাচীর দুটি স্তরে বিভক্ত, যথা - বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন (exine) এবং অন্তঃপ্রাচীর বা ইনটাইন (intine)।

অন্তঃপ্রাচীর বা ইনটাইন পেক্টো-সেলুলোজিক (pecto-cellulosic) প্রকৃতির, অর্থাৎ পেকটিন এবং সেলুলোজ দ্বারা অন্তঃপ্রাচীর গঠিত। বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন ফ্যাটি পদার্থ স্পোরোপোলেনিন (sporopollenin) দিয়ে গঠিত। ফ্যাটি পদার্থের সঙ্গে প্রোটিন উপাদান ও থাকে। এই বহিঃপ্রাচীর বা এক্সাইন দুটি অংশে বিভক্ত যথা, বাইরের দিকে অবস্থিত সেক্সাইন (sexine) বা একটেক্সাইন (ectexine) এবং ভিতরের দিকে অবস্থিত নেক্সাইন (nexine) বা এনডেক্সাইন (endexine) ।

পরাগরেণু বিভিন্ন আয়তনের হতে পারে যেমন অতি ক্ষুদ্র এবং বড় আয়তনের হয়। পরাগরেণুর গড় মাপ 10-17μ হয়। প্রতিটি পরাগরেণুর বহিঃ প্রাচীরে এক বা একাধিক রন্ধ্র থাকে, এদের রেনুরন্ধ্র (germ pores) বা জার্মিনাল ফারো (germinal furrows) বলে। এই রন্ধ্র গুলির মধ্য দিয়ে পরাগনালির নির্গমণ ঘটে।


১০) পরাগধানীর প্রতিটি খন্ডে কয়টি করে পরাগথলি থাকে?

উত্তর : পরাগধানীর প্রতিটি খন্ডে দুটি করে পরাগথলি থাকে।


১১) স্পোরোপোলেনিন কী?

উত্তর : স্পোরোপোলেনিন (Sporopollenin) হলো একপ্রকারের পচনরোধী যৌগ, যা পরাগরেণুর এক্সাইন গঠনকারী ক্যারোটিনয়েড যৌগের অক্সিডেটিভ পলিমারাইজেশন পদ্ধতিতে সৃষ্টি হয়।


১২) প্যালগনোলজি কী?

উত্তর : পরাগরেণু সংক্রান্ত বিজ্ঞান কে প্যালিনোলজি (Palynology) বলে।


১৩) যৌগিক পরাগরেণু কী?

উত্তর : যখন মাতৃকোশ থেকে উৎপন্ন চারটি পরাগরেণু পরস্পর পৃথক না হয়ে একত্রে থাকে, তখন তাকে যৌগিক পরাগরেণু বলে।

আরও পড়ুন : হরমোনের বৈশিষ্ট্য


😊 Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্টের আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে ফ্রিতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। 

😊 এই ওয়েবসাইট টিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য এটিকে আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করুন। 

😊 এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ। নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অপশনে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক, ফলো করতে পারেন। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন এবং সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেল।

😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলায়, বিজ্ঞানবুক -এ।

😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।

😊 ধন্যবাদ ।।

Share this page
Bigyanbook

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook whatsapp email

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post