classes
classes
 *West Bengal board only.

প্রতিবর্ত ক্রিয়া | Reflex action

{tocify} $title={এক নজরে শিরোনাম}

নমস্কার, স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো প্রতিবর্ত ক্রিয়া সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

www.bigyanbook.co.in

প্রতিবর্ত ক্রিয়া কাকে বলে? (What is Reflex action?)

নির্দিষ্ট উত্তেজনার প্রভাবে প্রাণীদেহে যে তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত এবং অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

প্রতিবর্ত ক্রিয়া দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিবর্ত ক্রিয়া অনৈচ্ছিক এবং এটি সুষুম্না কান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

সুতরাং বলা যায় যে, সুষুম্না কান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, প্রাণীদের অনৈচ্ছিক সাড়াকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।


প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ (Example of Reflex action) :

যখন কোনো গরম বস্তুতে আচমকা আমাদের হাত ঠেকে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে হাত আপনা আপনি সরে আসে, এটা প্রতিবর্ত ক্রিয়ার একটি উদাহরণ। এছাড়া, আরো অনেক উদাহরণ আছে যার মধ্যে হল, যখন আমাদের চোখে কোনো তীব্র আলো এসে পড়ে তখন আমাদের চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায় এটাও একটি প্রতিবর্ত ক্রিয়া।


প্রতিবর্ত ক্রিয়ার ব্যাখ্যা (Explanation of Reflex action) :

প্রথমে একটি উদাহরণ তারপর সেটার প্রতিবর্ত ক্রিয়ার ব্যাখ্যা‌। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ করে পায়ে কোনো কাঁটা ফুটে গেলে, পা তৎক্ষণাৎ মাটি থেকে সরে যায়। এটি একটি প্রতিবর্ত ক্রিয়া। এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া যেভাবে হয় –

১) প্রথমে পায়ের নিম্নতলের বা পায়ের নিচে চামড়ায় অবস্থিত গ্রাহক বা রিসেপ্টর বেদনা অনুভূতি গ্রহণ করে।

২) তারপর, বেদনা অনুভূতি গ্রহণ করার পর এই বেদনা অনুভূতি রিসেপ্টর থেকে অন্তর্বাহী নিউরন দিয়ে সুষুম্না কান্ড পৌঁছায়।

৩) তারপর, বেদনা অনুভূতি সুষুম্নামা কান্ডে পৌঁছানোর পর, সুষুম্না কান্ড থেকে সাড়া বহির্বাহী নিউরন দিয়ে কারক বা ইফেক্টর এ অর্থাৎ পায়ের পেশিতে পৌঁছায়।

৪) পায়ের পেশিতে সাড়া পৌঁছানোর পর পায়ের পেশী গুলি সংকুচিত হয় ফলে পা ভাঁজ হয়ে কাঁটা থেকে দূরে সরে যায়।

আরো পড়ুন: জিন থেরাপি

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণীবিভাগ (Classification of Reflex action) :

প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে রুশ বিজ্ঞানী প্যাভলভ দুই ভাগে ভাগ করেন। 1. সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তবিহীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং 2. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া।


1. সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তবিহীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Congenital Reflex action or Unconditional Reflex action) :

যে সমস্ত প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগত অর্থাৎ জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বংশগত সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত হয় তাকে সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তবিহীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

যেমন, জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর স্তন্যপানের ইচ্ছা, উজ্জ্বল আলো বা তীব্র আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

উৎপত্তি অনুসারে সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া দু রকমের হয়। ১) উপরিগত বা সুপারফিসিয়াল প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং ২) গভীর বা ডিপ প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

১) উপরিগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা সুপারফিসিয়াল প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Superficial Reflex action) :

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদ্দীপনা যখন দেহের প্রান্তদেশ অর্থাৎ ত্বক, চোখ ইত্যাদি থেকে আসে তখন তাকে উপরিগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা সুপারফিসিয়াল প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

যেমন, উজ্জ্বল আলো বা তীব্র আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি দিলে পায়ের পাতা সংকুচিত হওয়া ইত্যাদি উপরিগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা সুপারফিসিয়াল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ।

২) গভীর প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা ডিপ প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Deep Reflex action) :

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদ্দীপনা যখন দেহের অভ্যন্তরের কোনো পেশি, টেন্ডন ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন হয় তখন তাকে গভীর প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা ডিপ প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

যেমন, হাটু ঝাকুনি, বাইসেপস ঝাঁকুনি ইত্যাদি গভীর প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ।


2. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Habitual Reflex action or Conditional Reflex action) :

যে সমস্ত প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মের পর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয় তাকে অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

যেমন, কোনো কাজ বারবার অনুশীলন করলে কিছুদিন পর মস্তিষ্কের সাহায্য ছাড়াই ওই কাজটি করা সম্ভব হয়। এই ধরনের প্রতিবর্ত ক্রিয়া অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ। শিশুদের হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা ইত্যাদি অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ।

বিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘণ্টাধ্বনি করে একটি কুকুরকে খাবার দিতেন। এইভাবে কয়েকদিন অনুশীলনের পর কুকুরটিকে ওই নির্দিষ্ট সময়ে খাবার না দিয়ে কেবল ঘণ্টাধ্বনি করে দেখলেন যে কুকুরটির লালা নিঃসরণ হয়েছে। এরকম প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে তিনি অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া রূপে অভিহিত করেন।

আরো পড়ুন: অ্যান্টিজেন

উৎস অনুযায়ী প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণীবিভাগ :

উৎস অনুযায়ী প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১) সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং ২) জটিল প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

১) সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Simple Reflex action) :

যে প্রতিবর্ত ক্রিয়া শুধুমাত্র সুষুম্নামা কান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং প্রতিবর্ত পথ অল্পসংখ্যক স্নায়ু কোষ দিয়ে গঠিত হয় তাকে সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

যেমন, চোখে কিছু পড়ার উপক্রম হলে চোখ দুটি আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এটি একটি সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ।

২) জটিল প্রতিবর্ত ক্রিয়া (Complex Reflex action) :

যে প্রতিবর্ত ক্রিয়াতে সুষুম্নামা কান্ড ছাড়াও মস্তিষ্কের সাহায্যের প্রয়োজন হয় এবং প্রতিবর্ত পথে বহু সংখ্যক স্নায়ু কোষ থাকে তাকে জটিল প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

যেমন, হাঁটা চলা করা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি জটিল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ।


সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার পার্থক্য (Difference between Congenital Reflex action and Habitual Reflex action) :

👉 1. সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগত।

             👉 1. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগত নয় এই প্রতিবর্ত ক্রিয়া অভ্যাসের দ্বারা অর্জিত।

👉 2. সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া শর্ত নিরপেক্ষ।

            👉 2. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া শর্ত সাপেক্ষ।

👉 3. সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতার কোনো প্রয়োজন হয় না।

            👉 3. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।

👉 4. সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুপথ সরল প্রকৃতির হয়।

            👉 4. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুপথ অপেক্ষাকৃত জটিল প্রকৃতির হয়।


প্রশ্ন ও উত্তর :-


1. বিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে কয় ভাগে ভাগ করেন?

উত্তর: বিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে দুই ভাগে ভাগ করেন। যথা, সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তবিহীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

2. উৎস অনুযায়ী প্রতিবর্ত ক্রিয়া কয় ভাগে বিভক্ত এবং কি কি?

উত্তর: উৎস অনুযায়ী প্রতিবর্ত ক্রিয়া দুই ভাগে বিভক্ত। যথা, সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং জটিল প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

3. অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া কেন বলা হয়?

উত্তর: কোনো কাজ বারবার অনুশীলন করলে কিছুদিন পর মস্তিষ্কের সাহায্য ছাড়াই ওই কাজটি করা সম্ভব হয়, এইরকম প্রতিবর্ত ক্রিয়া শর্তসাপেক্ষ হওয়ার ফলে অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।

4. উৎপত্তি অনুসারে সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে কোন কোন ভাগে ভাগ করা হয়?

উত্তর: উৎপত্তি অনুসারে সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা, উপরিগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা সুপারফিসিয়াল প্রতিবর্ত ক্রিয়া এবং গভীর প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা ডিপ প্রতিবর্ত ক্রিয়া।

5. কোন প্রতিবর্ত ক্রিয়া তে সুষুম্না কান্ড ছাড়াও মস্তিষ্কের সাহায্যের প্রয়োজন হয়?

উত্তর: জটিল প্রতিবর্ত ক্রিয়া তে সুষুম্না কান্ড ছাড়াও মস্তিষ্কের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।

6. একটি সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ দাও।

উত্তর: একটি সরল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ হল, চোখে কিছু পড়ার উপক্রম হলে চোখ দুটি আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।


😊 Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্টের আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে ফ্রিতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। 

😊 এই ওয়েবসাইট টিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য এটিকে আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করুন। 

😊 এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ। নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অপশনে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক, ফলো করতে পারেন। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন এবং সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেল।

😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলায়, বিজ্ঞানবুক -এ।

😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।


😊 ধন্যবাদ ।।

বিজ্ঞানবুক

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন