নমস্কার, স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক গঠন সম্পর্কে। ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের আকৃতি, ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন প্রভৃতি সম্পর্কে আমরা এই পোস্টে জানবো। তা হলে চলুন শুরু করা যাক।
প্রথমে আমরা জানবো ক্রোমোজোম কি সেই সম্পর্কে।
• ক্রোমোজোম এর সংজ্ঞা :
ইউক্যারিওটিক কোষের নিউক্লিয়াস এর নিউক্লিয় জালিকা থেকে সৃষ্ট এবং প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত যে সুতোর মতো অংশ জীবর বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং প্রজাতির পরিব্যক্তি এবং বিবর্তনের মুখ্য ভূমিকা পালন করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমোজোম জিন এর বাহক এই তত্ত্ব প্রমাণিত হবার পরে, ক্রোমোজোমের গঠন সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়। ক্রোমোজোমের গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য যে গবেষণা গুলি শুরু হয় সেই সব গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রোক্যারিওটিক কোষ বা সরল কোষ এবং ইউক্যারিওটিক কোষ বা জটিল কোষে এর ক্রোমোজোমের গঠন বিন্যাস ও চরিত্র কিছুটা আলাদা। গবেষণাতে দেখা যায় যে প্রোক্যারিওটিক কোষ বা আদি কোষ এর একটি মাত্র ক্রোমোজোম থাকে।
অন্যদিকে, গবেষণাতে দেখা যায় যে ইউক্যারিওটিক কোষের একাধিক ক্রোমোজোম থাকে। ইউক্যারিওটিক কোষের ক্রোমোজোম গুলি সবসময় জোড়ায় জোড়ায় (in pairs) অবস্থান করে।
ইউক্যারিওটিক কোষের ক্রোমোজোমের এক একটি জোড়ায় দুটি ক্রোমোজোম এর প্রত্যেকটির আকৃতি (shape) ও আকার (size) একেবারে এক এবং অভিন্ন হয়।
ইউক্যারিওটিক কোষের এইরকম ভাবে জোড়া দুটি ক্রোমোজোম সংখ্যাকে একসঙ্গে ডিপ্লয়েড (2n) ক্রোমোজোমের বলা হয়।
কোনো প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি জীবের দেহ কোষের ক্রোমোজোম সব সময় নির্দিষ্ট অর্থাৎ ধ্রুবক থাকে।
উদাহরন:
মানুষের দেহ কোষের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা সব সময় 23 জোড়া হয়। আবার ড্রসোফিলা নামের মাছির ক্ষেত্রে এর দেহ কোষের ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সংখ্যা 4 জোড়া হয়।
অনেক সময় দেখা যায় যে দেহ কোষের কোন কোন ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় (in pairs) না থেকে একক ভাবে (in single set) ক্রোমোজোম গুলি অবস্থান করে। এই রকমের ক্রোমোজোম সংখ্যা কে হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমোজোম বলা হয়। জনন কোষ বা গ্যামেট (Gamete) এ হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে।
আরও পড়ুন: উদ্ভিদের রেচন পদার্থ
• ক্রোমোজোম এর আকৃতি :
যেকোনো ইউক্যারিওটিক কোষের ক্রোমোজোম গুলিকে শুধুমাত্র মাইটোসিস কোষ বিভাজন দশার সময়ই দেখা যায়। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশার ক্রোমোজোম গুলোকে দেখতে অনেকটা লাঠির মত বা সুতোর মতো হয়।
ক্রোমোজোম গুলির গঠন এবং আকৃতি কোষ বিভাজনের বিভিন্ন দশায় বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমোজোম এর নির্দিষ্ট কোনো আকৃতি থাকে না। প্রোফেজ দশা তে ক্রোমোজোম কুণ্ডলী পাকাতে শুরু করে। মেটাফেজ এবং অ্যানাফেজ দশাতে ক্রোমোজোম সবচেয়ে বেশি কুণ্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে এবং তখন ক্রোমোজোমের প্রকৃত গঠন বোঝা যায়। টেলোফেজ দশায় ক্রোমোজোমের আবার কুণ্ডলী খুলে যেতে থাকে।
আরও পড়ুন: ভাসেকটোমি এবং টিউবেকটোমি এর পার্থক্য
• ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম এর বহির্গঠন :
যে কোনো ইউক্যারিওটিক কোষের প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি প্রধান অংশ থাকে যেগুলি হলো ক্রোমাটিড এবং সেন্ট্রোমিয়ার।
> ক্রোমাটিড (Chromatid) :
প্রতিটি ক্রোমোজোম মেটাফেজ দশায় লম্বালম্বি ভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতোর মতো অংশ গঠন করে তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। প্রতিটি ক্রোমাটিড দৈর্ঘ্য বরাবর দুটি সুতোর মতো অংশ নিয়ে গঠিত হয়, এদের ক্রোমোনিমা বলে।
1. ক্রোমোমিয়ার (Chromomere) :
ক্রোমোজোম এর ক্রমোনিমার রাসায়নিক পদার্থ গুলির ঘনত্ব এক রকমের হয় না, স্থানে স্থানে এই ঘনত্ব খুব বেশি হয়। ক্রোমোনিমার পুঁতির মতো দেখতে বেশি ঘন অংশগুলোকে ক্রোমোমিয়ার বলে।
2. মুখ্য খাঁজ (Primary constriction) :
প্রতিটি ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোম এর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে এক রকমের গাছ দেখা যায়। কোন রঙে রঞ্জিত না হওয়া ওই স্থানটিকে মুখ্য খাঁজ বলে।
3. গৌণ খাঁজ (Secondary constriction) :
ক্রোমোজোমে মুখ্য খাঁজ বা প্রাথমিক খাঁজ ছাড়াও আরো একটি খাঁজ থাকে একে গৌণ খাঁজ বলে। এই গৌণ খাঁজ অংশটি নিউক্লিওলাস পুনর্গঠনে অংশগ্রহণ করে বলে একে নিউক্লিওলার অর্গানাইজার (Nucleolar organiser) বলে।
4. স্যাটেলাইট বডি (Satellite body) :
কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের গৌণ খাঁজের শেষ প্রান্তে যে ছোট অংশ থাকে তাকে স্যাটেলাইট বডি বলে। স্যাটেলাইট বডি দ্বারা সজ্জিত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম (Sat Chromosome) বলে।
5. টেলোমিয়ার (Telomere) :
✓ ধাত্র (matrix) :
আগের ধারণা অনুযায়ী ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিন সুতো দুটি একটি তরল সান্দ্র পদার্থের মধ্যে থাকে। এই জেলির মতো তরল সান্দ্র পদার্থকে ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স (matrix) বলে।
✓ পেলিকল :
আগের ধারণা অনুযায়ী ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিন সুতো দুটি একটি তরল সান্দ্র পদার্থের মধ্যে থাকে এই জেলির মত তরল সান্দ্র পদার্থকে ধাত্র বলে আর এই ধাত্র বাইরের দিকে থেকে যে আবরণী দিয়ে ঢাকা থাকে তাকে পেলিকল বলে।
কিন্তু বর্তমানে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ধাত্র বা পেলিকল এর অস্তিত্ব ধরা না পড়ায় আধুনিক বিজ্ঞানীরা এদের অস্তিত্বকে স্বীকার করেন না।
> সেন্ট্রোমিয়ার (Centromere) :
প্রত্যেক জোড়া ক্রোমাটিড একটি নির্দিষ্ট খাঁজে পরস্পরের সঙ্গে জোড়া অবস্থায় থাকে একে মুখ্য খাঁজ বা সেন্ট্রোমিয়ার বলে।
সেন্ট্রোমিয়ার এর অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোম নানান রকমের হয়।
1. মেটাসেন্ট্রিক :
এই ধরনের ক্রোমোজোম এর ক্ষেত্রে দুটি ক্রোমাটিড এর মধ্যবর্তী অঞ্চল এর কাছে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে। মেটাসেন্ট্রিক অবস্থানে ক্রোমোজোম দুটির বাহু দুটি দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয়।
2. সাব মেটাসেন্ট্রিক :
এই ধরনের ক্রোমোজোম এর ক্ষেত্রে, দুটি ক্রোমাটিড এর প্রায় শেষের দিকে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে। সাব মেটাসেন্ট্রিক অবস্থানে ক্রোমোজোম এর একটি বাহু অপর বাহুর তুলনায় কিছুটা লম্বা হয়।
3. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক :
এই ধরনের ক্রোমোজোম এর ক্ষেত্রে, ক্রোমাটিড দুটির একেবারে নিচের দিক থেকে কিছুটা উপরে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে। অ্যাক্রোসেন্ট্রিক অবস্থানে ক্রোমোজোম এর দুটি বাহুর একটি অনেকটা লম্বা এবং অপরটি তুলনায় অনেকটা ছোট হয়।
4. টেলোসেন্ট্রিক :
টেলোসেন্ট্রিক অবস্থানে ক্রোমোজোম এর সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমাটিড দুটির একেবারে শেষে অবস্থান করে।
😊 Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্টের আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে ফ্রিতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
😊 এই ওয়েবসাইট টিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য এটিকে আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করুন।
😊 এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ। নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অপশনে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক, ফলো করতে পারেন। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন এবং সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেল।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলায়, বিজ্ঞানবুক -এ।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।
😊 ধন্যবাদ ।।