উদ্ভিদের রেচন পদার্থ

{tocify} $title={এক নজরে শিরোনাম}

নমস্কার, স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুকে। এই পোস্টে আমরা জানবো উদ্ভিদের বিভিন্ন রকমের রেচন পদার্থ সম্পর্কে এবং তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

Bigyanbook


উদ্ভিদের রেচন পদার্থ দুই রকমের হয়। নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ এবং নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ। আমরা প্রথমে নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ সম্বন্ধে জানবো এবং বিভিন্ন নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থের উৎস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্বন্ধেও জানবো।


উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ

উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থের মধ্যে প্রধান কয়েকটি রেচন পদার্থ হলো, গঁদ বা গাম, রজন বা রেজিন, তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স। আমরা এই প্রধান নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করব এবং তাদের উৎস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।


১) গঁদ বা গাম (Gums) :

গদ বা গাম হলো জলে দ্রবণীয় উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন একরকমের রেচন পদার্থ বা বজ্র পদার্থ। সাধারণত সেলুলোজ দ্বারা গঠিত উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর নষ্ট হলে গঁদ বা গাম এর উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক কারণে অথবা কোনো আঘাতের ফলে উদ্ভিদের কান্ড এবং শাখার বাকল থেকে গঁদ বা গাম এর নিঃসরণ ঘটে।

উৎস: সজিনা, আমড়া, জিওল, বাবলা, সিরিজ প্রভৃতি গাছের বাকল থেকে গঁদ বা গাম নিঃসৃত হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: গঁদ বা গাম বিভিন্ন শিল্পে বিশেষ করে কাষ্ঠ শিল্প এবং বই বাঁধাই শিল্পে আঠা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Bigyanbook


২) রজন বা রেজিন (Resins) :

রজন বা রেজিন হল ঈষৎ হলুদ রং এর জলে অদ্রবণীয় এক ধরনের নাইট্রোজেন বিহীন উদ্ভিদের রেচন পদার্থ বা বর্জ্য পদার্থ। উদ্ভিদের এই নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ রজন বা রেজিন তিন রকমের হয়। যথা, ১] কঠিন রজন, ২] ওলিও রজন, ৩] গঁদ রজন।

১] কঠিন রজন এর উদাহরণ: চাঁচ গালা হলো কঠিন রজন এর উদাহরণ।

২] ওলিও রজন এর উদাহরণ: অলিও রজন হলো তরল রজন। টারপেন্টাইন হল ওলিও রজন এর উদাহরণ।

৩] গঁদ রজন এর উদাহরণ: এই ধরনের রজন গঁদ এর সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। তাই এই প্রকার রজন অর্ধ তরল এবং আঠালো হয়। ধুনা হিং ইত্যাদি হল গঁদ রজনের উদাহরণ।

উৎস: রজন বা রেজিন সাধারণত পাইন গাছের কান্ড, শাখা-প্রশাখা এবং পাতার রজন নালীতে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে। প্রাকৃতিক কোন কারণে বা কোনো আঘাতের ফলে রজন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: গালা, টারপেনটাইন, ভ্যানিস শিল্পে অর্থাৎ কাঠ রঙ করতে, সাবান ও ফিনাইল প্রস্তুত করতে রজন ব্যবহৃত হয়।

Bigyanbook


৩) তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স (Latex) :

তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স হলো প্রোটিন, গঁদ, রজন, উপক্ষার প্রভৃতি বস্তুর জলীয় মিশ্রণ। তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স উদ্ভিদের দীর্ঘ তরুক্ষীর কোষ এবং তরুক্ষীর নালীর মধ্যে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে। তরুক্ষীর দেখতে সাদা দুধের মত অথবা সাদা জলের মতো অথবা হলুদ রঙের হয়। সাদা দুধের মতো তরুক্ষীর দেখা যায় বট, আকন্দ, পেঁপে, কাঁঠাল, ফনিমনসা, রবার প্রভৃতি উদ্ভিদ এ। সাদা জলের মতো তরুক্ষীর দেখা যায় কলা, তামাক প্রভৃতি উদ্ভিদ এ। হলুদ রঙের তরুক্ষীর দেখা যায় আফিং, শিয়ালকাঁটা প্রভৃতি উদ্ভিদে।

উৎস: তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স বট, আকন্দ, রবার, ফনিমনসা, কলা, তামাক, শিয়ালকাঁটা প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর কোশে এবং তরুক্ষীর নালীতে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে। প্রাকৃতিকভাবে অথবা কোন আঘাতজনিত কারণে ঐ সমস্ত উদ্ভিদের কোন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে সেখান থেকে তরুক্ষীর নিঃসৃত হয়।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: হিভিয়া ব্রাসিলিয়েন্সিস (Hevea brasiliensis) নামের প্যারা রবার গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়। এই রবার থেকে টায়ার, টিউব, ইরেজার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রভৃৃৃৃতি বিভিন্ন প্রকার রবারের দ্রব্য প্রস্তুত হয়। পেঁপে গাছের তরুক্ষীর এ প্যাপাইন (Papine) নামে এক প্রকার উৎসেচক থাাকে যা প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে। এছাড়াও উদ্ভিদ দেহের তরুক্ষীর ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

Bigyanbook


উদ্ভিদের নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ

বিভিন্ন প্রকারের উপক্ষার হল উদ্ভিদের নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ।

১) উপক্ষার বা ক্ষারক পদার্থ বা অ্যালক্যালয়েড (Alkaloids) :

উপক্ষার হলো এক রকম নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগিক পদার্থ। প্রোটিন ভেঙে উপক্ষার এর সৃষ্টি হয়। উপক্ষার বা ক্ষারক পদার্থ বা অ্যালকালয়েড জলে অদ্রবণীয় এবং কোহলে এটি দ্রবণীয়। উপক্ষার বা অ্যালকালয়েড তরল অথবা কঠিন বা উভয় রকমের হতে পারে। উপক্ষার বা অ্যালকালয়েড স্বাদে কষা বা তিক্ত হয়।


উদ্ভিদের নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ - কিছু উপক্ষার -এর উৎস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব

1. কুইনাইন

উৎস: সিঙ্কোনা গাছের বাকল।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


2. রেসারপিন

উৎস: সর্পগন্ধা গাছের মূল।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


3. ডাটুরিন

উৎস: ধুতুরা গাছের পাতা এবং ফুল।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: হাঁপানির ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


4. নিকোটিন

উৎস: তামাক গাছের পাতা।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: মাদক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


5. স্ট্রিকনিন

উৎস: নাক্সভোমিকা বা কুঁচেলা গাছের বীজ।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পেটের পীড়ার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


6. মরফিন

উৎস: আফিং গাছের কাঁচা ফলের ত্বক।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: ব্যাথা বেদনার উপশম এবং গাঢ় নিদ্রার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


7. ক্যাফিন

উৎস: কফি গাছের বীজ।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: ব্যাথা বেদনার উপশমকারী ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।



উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থের উৎস এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব একনজরে —

1. গঁদ বা গাম

উৎস: বাবলা, জিওল, শিমূল, শিরিষ প্রভৃতি গাছের বাকল বা ছাল।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: বই বাঁধাই শিল্পে, কাষ্ঠ শিল্পে ও জুতা তৈরি ও মেরামতির কাজে গঁদ বা গাম আঠা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কর্পূর, পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।


2. রজন বা রেজিন

উৎস: পাইন গাছের কান্ডের রজন নালী, শাল গাছের বাকল বা ছাল এর মধ্যে ধুনা থাকে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: গালা, টারপেনটাইন কাঠে রং করতে বা পালিশ করতে ব্যবহৃত হয়। ধুনা, পূজা পার্বণ এ ব্যবহৃত হয়। হিং, মিষ্টান্ন, পায়েস তৈরিতে ও মশলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


3. তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স

উৎস: রবার, পেঁপে, বট, আকন্দ, ফণিমনসা, করবী, কাঁঠাল, মনসা ইত্যাদি গাছের কান্ড এবং পাতার তরুক্ষীর নালী।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব: রবার গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়। পেঁপে গাছের তরুক্ষীর এ অবস্থিত প্যাপাইন প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে।


উদ্ভিদের রেচন পদার্থ থেকে প্রশ্ন ও উত্তর

১) রজন কয় প্রকারের এবং কী কী ?

উত্তর: রজন তিন প্রকারের যথা, কঠিন রজন, ওলিও রজন এবং গঁদ রজন।


২) কোন গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়?

উত্তর: Hevea brasiliensis নামের প্যারা রবার গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়।


৩) উদ্ভিদের একটি নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থের নাম লেখ যা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

উত্তর: রেসারপিন, এটি সর্পগন্ধা গাছের মূল থেকে পাওয়া যায় একটি নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ, এটি উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


৪) রজন বা রেজিন এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব লেখো।

উত্তর: গালা, টারপেনটাইন কাঠে রং করতে বা পালিশ করতে ব্যবহৃত হয়। ধুনা, পূজা পার্বণ এ ব্যবহৃত হয়। হিং, মিষ্টান্ন, পায়েস তৈরিতে ও মশলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


৫) উদ্ভিদের একটি নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থের নাম লেখ যা ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

উত্তর: কুইনাইন, এটি সিঙ্কোনা গাছের বাকল থেকে পাওয়া যায় একটি নাইট্রোজেন যুক্ত রেচন পদার্থ, এটি ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।


৬) উদ্ভিদ দেহ থেকে কীভাবে তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স এর নিঃসরণ ঘটে?

উত্তর: প্রাকৃতিক ভাবে বা আঘাতজনিত কারণে উদ্ভিদের কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে সেই অংশ থেকে তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স এর নিঃসরণ ঘটে।


৭) সাদা জলের মতো তরুক্ষীর কোন উদ্ভিদে দেখতে পাওয়া যায়?

উত্তর: সাদা জলের মতো তরুক্ষীর কলা, তামাক উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়।


৮) তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স উদ্ভিদ দেহের কোন অংশে সঞ্চিত থাকে?

উত্তর: তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স উদ্ভিদের দীর্ঘ তরুক্ষীর কোষ এবং তরুক্ষীর নালীতে সঞ্চিত থাকে।


৯) পেঁপে গাছের তরুক্ষীর এ কোন উৎসেচক থাকে?

উত্তর: পেঁপে গাছের তরুক্ষীর এ প্যাপাইন (Papine) নামের উৎসেচক থাকে।


১০) একটি রজন বা রেজিনের নাম লেখো যা বিভিন্ন পূজা-পার্বণে ব্যবহৃত হয়।

উত্তর: ধুনা, বিভিন্ন পূজা-পার্বণে ব্যবহৃত হয়। এটি এক প্রকারের রজন বা রেজিন যা শাল গাছের বাকলে থাকে।


আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই জানাবেন। ফলো করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল। সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল। দেখুন আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলিও।

বিজ্ঞানবুক

লেখাটি কেমন কমেন্ট করে জানান। শেয়ার করুন এই পেজটি। পড়ুন অন্যান্য পোস্টগুলিও। youtube facebook

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন