নমস্কার, স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, ল্যামার্কবাদ এবং ডারউইনবাদ এর মধ্যে পার্থক্য। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ল্যামার্কবাদ এবং ডারউইনবাদ এর পার্থক্য (Difference between Lamarckism and Darwinism)
👉 ১) ল্যামার্কবাদ: এই মতবাদ অনুযায়ী, জীব মাত্রই প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে বেঁচে থাকে এবং পরিবেশের তারতম্য অনুযায়ী জীব দেহের অভিযোজন জনিত তারতম্য ঘটে।
👉 ১) ডারউইনবাদ: এই মতবাদ অনুযায়ী, যে সমস্ত জীব জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারে, একমাত্র তারাই প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে। জীবকে সর্বক্ষন বেঁচে থাকার জন্য সংগ্ৰাম করতে হয়।
👉 ২) ল্যামার্কবাদ: দেহের কোনো অঙ্গ এর ব্যবহার এবং অব্যবহার এর জন্য, সেই অঙ্গ এর পরিবর্তন, বৃদ্ধি বা অবলুপ্তি ঘটে এবং ওই অর্জিত পরিবর্তন গুলি বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হওয়ার ফলে জৈব বিবর্তন ঘটে।
👉 ২) ডারউইনবাদ: জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য জীব দেহে বিভিন্ন প্রকারের ভেদ বা প্রকরণ দেখা যায়, যা জৈব অভিব্যক্তির প্রধান কারণ।
👉 ৩) ল্যামার্কবাদ: এই মতবাদ অনুযায়ী, দেহের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ গুলির অতীতে ব্যবহার ছিল। কিন্তু অঙ্গ গুলির ব্যবহার না হওয়ার জন্য বর্তমানে অঙ্গ গুলি লুপ্তপ্রায় হয়েছে।
👉 ৩) ডারউইনবাদ: এই মতবাদে, দেহের নিষ্ক্রিয় অঙ্গ গুলির সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ বা ব্যাখ্যা নেই।
👉 ৪) ল্যামার্কবাদ: এই মতবাদে, জীবের "আয়তন বৃদ্ধির কথা" বলা হয়েছে।
👉 ৪) ডারউইনবাদ: এই মতবাদে, জীবের "সংখ্যা বৃদ্ধির কথা" বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রোমাটিন ও হেটারোক্রোমাটিন এর মধ্যে পার্থক্য
• ল্যামার্ক এর তত্ত্ব (Theory of Lamarck)
অভিব্যক্তির উপর সর্বপ্রথম ল্যামার্ক তার বিশ্লেষণী তত্ত্ব এর প্রতিষ্ঠা করেন। 1890 খ্রিস্টাব্দে তার লেখা 'ফিলোসফিক জুওলজিক' নামের বইতে তিনি এই বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেন। ল্যামার্ক এর তত্ত্ব কে 'ল্যামার্কিজম' বা 'ল্যামার্কবাদ' বলে। কয়েকটি প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় এর উপর ভিত্তি করে ল্যামার্কবাদ গঠিত হয়েছে।
ল্যামার্কবাদ এর এই প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি হলো, ১) ব্যবহার এবং অব্যবহার এর সুত্র (Law of use and disuse) , ২) পরিবেশের প্রভাব এবং জীবের সচেষ্টতা (Efforts) , ৩) অর্জিত বৈশিষ্ট্য এর বংশানুসরণ (Inheritance of acquired characters) , ৪) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি (Origin of new species)
• ডারউইন এর তত্ত্ব (Theory of Darwin)
অভিব্যক্তি সম্পর্কে ডারউইন যে মতবাদ প্রকাশ করেন, সেই মতবাদ কে 'ডারউইনবাদ' বা 'প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ' বলা হয়। 1959 খ্রিস্টাব্দে 'Origin of Species by means of Natural Selection' নামের গ্ৰন্থে ডারউইন তার মতবাদ গুলি প্রকাশ করেন।
ডারউইন এর যে প্রতিপাদ্য বিষয় গুলি ছিল সেগুলি হলো, ১) অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি , ২) অস্তিত্বের জন্য সংগ্ৰাম , ৩) ভ্যারিয়েশন বা ভেদ বা প্রকরণ , ৪) যোগ্যতমের উদবর্তন , ৫) প্রাকৃতিক নির্বাচন , ৬) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ।
• ল্যামার্ক এর তত্ত্ব এর ব্যাখ্যা বা ল্যামার্কবাদ এর ব্যাখ্যা (Explanation of Lamarckism)
👉 ১) ব্যবহার এবং অব্যবহার এর সুত্র (Law of use and disuse) :
ল্যামার্ক এর মত অনুযায়ী, জীবের প্রয়োজনে জীবদেহে কোনো নতুন অঙ্গ এর উৎপত্তি বা কোনো পুরানো অঙ্গ এর অবলুপ্তি ঘটতে পারে। ল্যামার্ক এর মত অনুযায়ী, যদি কোনো জীবের কোনো অঙ্গ ধারাবাহিক ভাবে ক্রমাগত ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেই অঙ্গ পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার জন্য ধীরে ধীরে সবল এবং সুগঠিত হবে। অপরদিকে, জীবের কোনো অঙ্গ পরিবেশের পক্ষে অপ্রয়োজনীয় হলে অর্থাৎ কোনো অঙ্গ এর ব্যবহার না হলে, ক্রমাগত অব্যবহার এর জন্য অঙ্গটি নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হবে এবং অবশেষে অঙ্গটি অবলুপ্ত হয়ে যাবে।
👉 ২) পরিবেশের প্রভাব এবং জীবের সচেষ্টতা (Efforts) :
পরিবর্তিত হতে থাকা পরিবেশে জীব সব সময় নিজেকে উপযুক্ত হিসেবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এটি জীবের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। স্বাভাবিক ভাবে পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে অভিযোজিত করতে জীব দেহে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। ল্যামার্ক এর মত অনুযায়ী, জীব সজ্ঞানে, নিজের চেষ্টায় বিশেষ কোনো অঙ্গ এর বৃদ্ধি বা ক্ষয় করে বিবর্তন এর ধারা পরিবর্তন করতে পারে। এটিও একটি জীবের অর্জিত বৈশিষ্ট্য।
👉 ৩) অর্জিত বৈশিষ্ট্য এর বংশানুসরণ (Inheritance of acquired characters) :
ল্যামার্ক এর মত অনুযায়ী, কোনো জীব এর জীবন কালে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়, সেই সমস্ত বৈশিষ্ট্য এক জনু থেকে অপর জনুতে সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ, অর্জিত বৈশিষ্ট্য এর বংশানুসরণ ঘটে।
👉 ৪) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি (Origin of new species) :
ল্যামার্ক এর মত অনুযায়ী, অর্জিত বৈশিষ্ট্য এর বংশানুসরণ এর জন্য এবং প্রতিটি জনুতে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ার ফলে, ধীরে ধীরে একটি প্রজাতি থেকে অপর একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে।
আরও পড়ুন: ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের অঙ্গসংস্থানিক গঠন
• ডারউইন এর তত্ত্ব এর ব্যাখ্যা বা ডারউইনবাদ এর ব্যাখ্যা (Explanation of Darwinism)
👉 ১) অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি (Prodigality of production) :
ডারউইন এর মত অনুযায়ী, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এর ফলে জ্যামিতিক বা গাণিতিক হারে জীব এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
👉 ২) সীমিত খাদ্য এবং বাসস্থান (Constancy of food and shelter) :
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আয়তন সীমাবদ্ধ হওয়ায় জীব এর বাসস্থান এবং খাদ্যও সীমিত।
👉 ৩) অস্তিত্বের জন্য সংগ্ৰাম (Struggle for existence) :
জীব এর সংখ্যা বৃদ্ধি জ্যামিতিক বা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং খাদ্য এবং বাসস্থান সীমিত থাকার জন্য, জীবকে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। ডারউইন এই ধরনের সংগ্ৰামকে 'অস্তিত্বের জন্য সংগ্ৰাম' বলে অভিহিত করেছেন।
এই অস্তিত্বের জন্য সংগ্ৰাম তিন প্রকারের হয়।
» ১] বিষম প্রজাতির সঙ্গে সংগ্ৰাম (Interspecific struggle) :
যে কোনো দুই বা ততোধিক প্রজাতির মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য যে সংগ্ৰাম বা প্রতিযোগিতা চলে তাকে বিষম প্রজাতির সংগ্রাম বলে।
» ২] স্বপ্রজাতির সঙ্গে সংগ্ৰাম (Intraspecific struggle) :
একই প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে খাদ্য এবং বাসস্থান একই রকমের হওয়ায়, সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একে আন্ত প্রজাতির সংগ্ৰাম বা স্বপ্রজাতির সঙ্গে সংগ্ৰাম বলে।
» ৩] প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্ৰাম অর্থাৎ পরিবেশগত সংগ্ৰাম (Struggle against odd environment) :
বন্যা, খরা, ঝড়, ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত প্রভৃতি প্রতিকূল পরিবেশ জীব এর স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে ব্যাহত করে। জীবকে তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত এই সমস্ত প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্ৰাম করতে হয়।
👉 ৪) ভ্যারিয়েশন বা ভেদ বা প্রকরণ (Variation in the organism) :
ডারউইন এর মত অনুযায়ী, পৃথিবীতে যে কোনো দুটি জীব কখনোই একই রকমের হতে পারে না। জীব এর মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য বা ভেদ থাকবেই। এমনকি, পিতা-মাতার সন্তানদের মধ্যেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ডারউইন মনে করতেন যে, অবিরত ভাবে ঘটে চলা ত্রিবিধ সংগ্ৰামের ফলে জীব দেহে প্রকরণ বা পার্থক্য সৃষ্টি হয় যা প্রজনন কালে অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয় এবং পরিশেষে জীবের বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
👉 ৫) যোগ্যতমের উদবর্তন (Survival of the fittest) :
ডারউইন এর মত অনুযায়ী, যে সমস্ত প্রকরণ বা ভেদ জীব এর জীবন সংগ্রামের পক্ষে সহায়ক এবং পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন মূলক, শুধুমাত্র তারাই বেঁচে থাকতে পারবে এবং তাদের উদবর্তন ঘটবে। অন্যান্যরা কালক্রমে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যে, কোনো একটি জীব কোনো বিশেষ পরিবেশের মধ্যে বাঁচার অযোগ্য হলেও অন্য কোনো পরিবেশে সেই জীব বাঁচার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
👉 ৬) প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural selection) :
প্রাকৃতিক নির্বাচন হলো ডারউইন তত্ত্ব এর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য। যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ বা অভিযোজন মূলক ভেদ সমন্বিত জীবেরা অন্যান্যদের সঙ্গে প্রতিযোগীতায় বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে। অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হলে, তারা বেশি সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, প্রতিকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হয় না, ফলে তারা ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়।
👉 ৭) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি (Origin of new species) :
একটি বিশেষ জীব গোষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকরণগুলি পুঞ্জীভূত হওয়ায় উদবংশীয় জীব এবং উত্তর পুরুষের মধ্যে অনেক বেশি বৈসাদৃশ্য দেখা যায়। এর ফলে কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি হয়। বিবর্তন এর ফলে জীবজগতে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়।
😊 Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্টের আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে ফ্রিতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
😊 এই ওয়েবসাইট টিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য এটিকে আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করুন।
😊 এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ। নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অপশনে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক, ফলো করতে পারেন। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন এবং সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেল।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলায়, বিজ্ঞানবুক -এ।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।
😊 ধন্যবাদ ।।