নমস্কার, স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুক এ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, অ্যান্টিজেন কি সেই সম্পর্কে, অ্যান্টিজেন এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিজেনের সাধারণ ধর্ম এছাড়াও অ্যান্টিজেন থেকে আরো অন্যান্য তথ্য এবং প্রশ্ন ও উত্তর। তা হলে চলুন শুরু করা যাক।
অ্যান্টিজেন হল বিজাতীয় জীবাণু বা অধিবিষ বা টক্সিন (toxin)। এই বিজাতীয় জীবাণু বা অধিবিষ দেহে প্রবেশ করলে কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে অনাক্রমতা আসে। প্রতিটি জীবাণুতে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এবং অধিবিষ বা টক্সিনেও এক বা একাধিক নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ থাকে। অ্যান্টিজেন সাধারণত প্রোটিন, বৃহদাকৃতির পলিস্যাকারাইড বা বৃহদাকার লাইপোপ্রোটিন যৌগ হয়।
অ্যান্টিজেন কি ?
যে সব বিজাতীয় জীবাণু বা অধিবিষ (toxin) দেহে প্রবেশ করলে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয় তাদেরকে অ্যান্টিজেন বলে।
অ্যান্টিজেন এর বৈশিষ্ট্য (Characters of Antigen) :
1. অ্যান্টিজেনের যে বিশেষ অঞ্চলে অ্যান্টিবডি সংযুক্ত হয়, সেই অঞ্চলকে এপিটোপ (Epitope) বা অ্যান্টিজেন ডিটারমিন্যান্ট স্থান বা অন্টিজেনিক ডিটার্মিনান্টস (Antigen determinant site) বলে।
2. এপিটোপ অঞ্চলে বা অ্যান্টিজেন ডিটারমিন্যান্ট স্থানে নির্দিষ্ট রাসায়নিক গ্রুপ থাকে। অ্যান্টিবডির প্যারাটোপ (Paratope) বা অ্যান্টিজেন বাইন্ডিং স্থান (Antigen binding site) এই স্থানের সংলগ্ন হয়।
3. বেশিরভাগ অ্যান্টিজেনের অনেকগুলি অ্যান্টিজেন ডিটারমিনেট স্থান থাকে। এই ধরনের অ্যান্টিজেন দের মাল্টিভ্যালেন্ট (multivallent) বলে।
4. অ্যান্টিজেনের অনাক্রম্যতা করন (immunogenicity) এবং বিক্রিয়া করণ (reactivity) ক্ষমতা থাকে। যে সমস্ত অ্যান্টিজেনের, অনাক্রম্যতা করন এবং বিক্রিয়া করণ উভয় ক্ষমতা থাকে তাদের সম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন (Complete antigen) বলে।
অ্যান্টিজেনের সাধারণ ধর্ম (General properties of antigen) :
1. অ্যান্টিজেন প্রধানত প্রোটিন ধর্মী হয়। কিছু কিছু অ্যান্টিজেন পলিস্যাকারাইড এবং লাইপোপ্রোটিন জাতীয় হয়।
2. নির্দিষ্ট বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অ্যান্টিজেন সাধারণভাবে বহিরাগত ধর্মী হয়।
3. কার্যকরী অ্যান্টিজেনের আণবিক ভর সাধারণত 10,000 ডালটন এর থেকে বেশি হয়। সবথেকে ভালো কোনো এন্টিজেন এর আণবিক ভর প্রায় 100,000 ডালটন হওয়া প্রয়োজন। ইনসুলিন এর আণবিক ভর 5000 ডালটন।
4. কোনো পদার্থকে অ্যান্টিজেন হতে হলে, সেই পদার্থের এমন কিছু গঠন বা ডিটারমিন্যান্ট গ্রুপ এর থাকা প্রয়োজন যা অনাক্রম্যতন্ত্র এর বিভিন্ন উপাদান কর্তৃক চিহ্নিত হতে পারে।
5. একই প্রজাতির অন্তর্গত সমস্ত প্রাণীর কলাতে প্রজাতি নির্দিষ্টতা অ্যান্টিজেন উপস্থিত থাকে।
6. প্রাণীর নির্দিষ্ট কোনো কলা বা অঙ্গে, অঙ্গ নির্দিষ্টতা অ্যান্টিজেন থাকে।
বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিজেন (Types of antigen) :
অ্যান্টিজেন দুই প্রকারের হয়। এক্সোজেনাস অ্যান্টিজেন এবং এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন।
1. এক্সোজেনাস অ্যান্টিজেন (Exogenous antigen) :
যে সমস্ত অ্যান্টিজেন প্রাণী দেহের বাইরে উৎপন্ন হয় তাদের এক্সোজেনাস অ্যান্টিজেন বলে। উদাহরণ, পরাগরেণু, বিভিন্ন দূষক পদার্থ, ভেষজ পদার্থ, বিভিন্ন প্রকারের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ইত্যাদি।
2. এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন (Endogenous antigen) :
যে সমস্ত অ্যান্টিজেন প্রাণী দেহের মধ্যে বা প্রাণী দেহের ভিতরে উৎপন্ন হয় তাদেরকে এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন বলে। উদাহরণ, ইঁদুর, বিড়াল, ভেড়া, গাধা প্রভৃতি প্রাণীর লোহিত কণিকায় অবস্থিত ফরসম্যান অ্যান্টিজেন (Forssman antigen), স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃদপিন্ড এ অবস্থিত কার্ডিওলিপিন (cardiolipin) অ্যান্টিজেন।
এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন, জেনোজেনিক অ্যান্টিজেন, অটোলোগাস অ্যান্টিজেন, অ্যালোজেনিক অ্যান্টিজেন প্রভৃতি।
• জেনোজেনিক অ্যান্টিজেন (Xenogeni antigen) :
জাতিজনি গত ভাবে পৃথক, এমন প্রজাতির দেহে যে সব সম প্রকৃতির অ্যান্টিজেন দেখা যায় তাদের জেনোজেনিক অ্যান্টিজেন বলে।
• অটোলোগাস অ্যান্টিজেন (Autologous antigen) :
বিশেষ পরিস্থিতি সাপেক্ষে যখন কোনো দেহ গঠনকারী উপাদান অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে তখন তাকে অটোলোগাস অ্যান্টিজেন বলে।
• অ্যালোজেনিক অ্যান্টিজেন (Allogenic antigen) :
একই প্রজাতিভুক্ত দুটি প্রাণীর যেসব অ্যান্টিজেন জিনগতভাবে নিয়ন্ত্রিত কিন্তু অন্টিজেনিক ডিটারমিন্যান্ট দ্বারা পরস্পরের থেকে পৃথক থাকে, তাদের অ্যালোজেনিক অ্যান্টিজেন বলে। অ্যালোজেনিক অ্যান্টিজেন প্রাণীদেহের লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অণুচক্রিকা, সিরাম, প্রোটিন প্রভৃতিতে থাকে।
অ্যান্টিজেন থেকে আরো অন্যান্য তথ্য এবং প্রশ্ন ও উত্তর :-
প্রশ্ন উত্তর
• সম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন কাকে বলে?
— প্রোটিন ধর্মী অ্যান্টিজেন কে সম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন বলে।
• অসম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন কাকে বলে?
— নিম্ন আণবিক ভর যুক্ত রাসায়নিক পদার্থ আগে থেকে তৈরি অ্যান্টিবডি সঙ্গে যুক্ত হতে পারে কিন্তু নিজেরা এককভাবে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করতে পারে না এদের অসম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন বা হ্যাপটেনস (Haptens) বলে।
• হ্যাপটেনস কী? (What is Haptens?)
— নিম্ন আণবিক ভর যুক্ত রাসায়নিক পদার্থ আগে থেকে তৈরি অ্যান্টিবডি সঙ্গে যুক্ত হতে পারে কিন্তু নিজেরা এককভাবে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করতে পারে না এদের অসম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন বা হ্যাপটেনস (Haptens) বলে।
• অ্যাডজুভ্যান্ট কাকে বলে? (What is adjuvant?)
— অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে যে পদার্থকে অ্যান্টিজেনের সঙ্গে অথবা পৃথকভাবে দেহের মধ্যে প্রবেশ করানো হয় তাকে অ্যাডজুভ্যান্ট (adjuvant) বলে।
• এপিটোপ কী? (What is Epitope?)
— অ্যান্টিজেনের যে বিশেষ অঞ্চলে অ্যান্টিবডি সংযুক্ত হয়, সেই অঞ্চলকে এপিটোপ (Epitope) বলে।
• অ্যান্টিজেন ডিটারমিন্যান্ট অঞ্চল কী? (What is antigen determinant site?)
— অ্যান্টিজেনের যে বিশেষ অঞ্চলে অ্যান্টিবডি সংযুক্ত হয়, সেই অঞ্চলকে অ্যান্টিজেন ডিটারমিন্যান্ট অঞ্চল (antigen determinant site) বলে।
• দুটি এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন এর উদাহরণ লেখো। (Give two examples of Endogenous antigen.)
— দুটি এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন এর উদাহরণ হলো, ফরসম্যান অ্যান্টিজেন (Forssman antigen) এবং কার্ডিওলিপিন অ্যান্টিজেন (Cardiolipin antigen)।
• প্যারাটোপ কী? (What is Paratope?)
— অ্যান্টিবডি এবং লিম্ফোসাইট এর যে অংশ অ্যান্টিজেনের এপিটোপ অঞ্চলের সঙ্গে রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাকে প্যারাটোপ বলে।
• অ্যান্টিজেনিসিটি কী? (What is Antigenicity?)
— অ্যান্টিজেন কর্তৃক অ্যান্টিবডি সৃষ্টির উদ্দীপনা জাগানোর ক্ষমতাকে অন্টিজেনিসিটি বলে।
• ইমিউনোজেনিসিটি কী? (What is immunogenicity?)
— কোশ ভিত্তিক ভাবে অনাক্রমতা বা ইমিউনিটি সাড়া জাগানোর ক্ষমতাকে ইমিউনোজেনিসিটি (immunogenicity) বলে।
😊 Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্টের আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে ফ্রিতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
😊 এই ওয়েবসাইট টিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য এটিকে আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করুন।
😊 এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ। নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অপশনে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক, ফলো করতে পারেন। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন এবং সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেল।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলায়, বিজ্ঞানবুক -এ।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।
😊 ধন্যবাদ ।।