নমস্কার, স্বাগত আপনাকে বিজ্ঞানবুকে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব যে বিষয় নিয়ে তা হলো জিন থেরাপি। বিভিন্ন ধরনের জিন থেরাপি, যেমন ইনভিভো জিন থেরাপি, এক্স ভিভো জিন থেরাপি এবং আরও অন্যান্য জিন থেরাপি সম্পর্কে এই আর্টিকেলে জানবো। তা হলে চলুন শুরু করা যাক।
জিন গত ত্রুটির কারণে কোনো রোগ দেখা দিলে ওই রোগাক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ত্রুটিমুক্ত জিন প্রবেশ করিয়ে রোগ নিরাময়ের পদ্ধতিকে জিন থেরাপি বলে।
ইন ভিভো জিন থেরাপি কী? (What is in vivo gene therapy?)
যেকোনো ধরনের জিনগত ত্রুটির ক্ষেত্রে, দেহকোষে কোনো না কোনো জিনের মধ্যে ত্রুটি আসে। তখন ওই জিন আর স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে না। এই ত্রুটি যুক্ত কোশে ভালো জিন ঢোকানো যেতে পারে। যে পদ্ধতিতে এই ধরনের ত্রুটি যুক্ত দেহকোষে ভালো জিন ঢোকানো হয় তাকে ইন ভিভো জিন থেরাপি (in vivo gene therapy) বলে।
এক্স ভিভো জিন থেরাপি কী? (What is ex vivo gene therapy?)
জিন গত ত্রুটির ফলে দেহকোষে কোনো না কোনো জিনের ত্রুটি আসে তখন ওই জিন আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। তখন দেহ থেকে ওই ত্রুটিপূর্ণ কোষ বের করে তার মধ্যে ভালো জিন ঢুকিয়ে তারপর ওই কোষকে দেহের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা যায়। যে পদ্ধতিতে এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ কোশ দেহ থেকে বের করে তারমধ্যে ভালো জিন ঢুকিয়ে ওই কোষকে দেহের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয় তাকে এক্স ভিভো জিন থেরাপি (ex vivo gene therapy) বলে।
জিন থেরাপির আবিষ্কার :
1970 খ্রিস্টাব্দে ট্রান্সফেকশন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। এই পদ্ধতিতে পালন মাধ্যমে বা কালচার মিডিয়ামে কোষের মধ্যে বাইরে থেকে মুক্ত DNA খন্ড ঢোকানো সম্ভব হয়। এরপর, 1980 খ্রিস্টাব্দে রেট্রোভাইরাস ভেক্টরের সাহায্যে কোনো স্তন্যপায়ী জিনের অনুপ্রবেশ ঘটানো সম্ভব হয় প্রথম বার। এই দুটি পদ্ধতিকে জিন থেরাপির প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
1990 খ্রিস্টাব্দে ব্লেস (Blaese) এবং আন্ডারসন (Anderson) সর্বপ্রথম মানুষের শরীরে জিন থেরাপির প্রয়োগ করেন। ব্লেস ও আন্ডারসন কে জিন থেরাপির পথ প্রদর্শক বলা হয়। অ্যাডেনোসিন ডি অ্যামিনেজ বা ADA শূন্য মানুষ, অনাক্রম্যতাহীন হয়, ADA জিনের মিউটেশন এর কারণে এই রোগ দেখা দেয়। এই রোগে আক্রান্ত ADA হীন মানুষের শরীরে প্রথম ব্লেস ও আন্ডারসন T-লিম্ফোসাইট এ অ্যাডিনোসিন ডি অ্যামিনেজ জিন ঢুকিয়ে এই মানুষটিকে ত্রুটিমুক্ত করেন।
জিন থেরাপির মাধ্যমে মানুষের অনেক রকমের জিন ঘটিত রোগ সারানো যেতে পারে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতগুলি রোগ হলো, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, আলফা-I অ্যান্টিট্রিপসিন শূন্যতা এবং Alport সিন্ড্রোম। এছাড়াও মনে করা হয়, ক্যান্সার এর চিকিৎসায় জিন থেরাপি ভালো ফল দিতে পারে।
জিন থেরাপির বিভিন্ন প্রকারভেদ (Types of gene therapy) :
জিন থেরাপি দুই প্রকারের হয়। যথা, 1. ক্লাসিক্যাল জিন থেরাপি (Classical Gene Therapy) এবং 2. নন ক্লাসিক্যাল জিন থেরাপি (Non-Classical Gene Therapy)।
1. ক্ল্যাসিকাল জিন থেরাপি (Classical Gene Therapy) :
এই পদ্ধতিতে, দেহকোষে জিন গত ত্রুটির সারানোর জন্য দেহের কোনো নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা কোশে বা টার্গেট কোশে ভালো জিন প্রবিষ্ট করানো হয়। নির্দিষ্ট কোষের মধ্যে প্রবিষ্ট হওয়ার পর জিন তার প্রকাশ ঘটিয়ে রোগীকে সুস্থ করে।
2. নন ক্লাসিক্যাল জিন থেরাপি (Non Classical Gene Therapy) :
এই পদ্ধতিতে, জিনের প্রকাশ এর কারণে কোনো রোগ দেখা দিলে, তার প্রকাশ রোধ করা হয় বা দেহের কোনো ত্রুটি যুক্ত জিনকে সারিয়ে তোলা হয়।
নন ক্লাসিক্যাল জিন থেরাপি তিন প্রকারের। যথা, a) দেহ কোশ জিন থেরাপি, b) জনন কোষ জিন থেরাপি এবং c) স্টেম কোষ জিন থেরাপি বা থেরাপিউটিক ক্লোনিং।
a) দেহ কোশ জিন থেরাপি (Somatic Cell Gene Therapy) :
এই পদ্ধতিতে দেহের কোনো কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে জিন থেরাপি করা হয়। এই জিন থেরাপি পদ্ধতিতে দেহের কোনো কলাকোশ পরিবর্তিত হয় বলে, সন্তান-সন্ততিরা এই ধরনের পরিবর্তনের উত্তরাধিকারী হয় না। জিন গত ত্রুটির কারণে দেহের কোন গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে কাজ না করলে দেহ কোষ জিন থেরাপি পদ্ধতির দ্বারা ওই গ্রন্থিকে পুনরায় সচল বা কর্মক্ষম করে তোলা যায়। দেহ কোষ জিন থেরাপি পদ্ধতির একটি প্রকার হলো, DNA ভ্যাকসিন।
b) জনন কোষ জিন থেরাপি (Reproductive Cell Gene Therapy) :
জনন কোষ জিন থেরাপি পদ্ধতিতে কোন রোগ গ্রস্ত ব্যক্তির জনন কোষে জিনগত ত্রুটি থাকলে তা দূর করা যায়। এর ফলে ওই ব্যক্তির গ্যামেট উৎপাদনের সময় কোনো জিনগত ত্রুটি আর থাকে না এবং এই ধরনের জিন ঘটিত ত্রুটি ওই ব্যক্তির সন্তান-সন্ততির মধ্যেও সঞ্চারিত হতে পারে না।
c) স্টেম কোশ থেরাপি বা থেরাপিউটিক ক্লোনিং (Stem Cell Therapy) :
স্টেম কোষ বা স্টেম সেল হলো দেহের মধ্যে থাকা কিছু অসম্পূর্ণ বিভেদিত কোশ। স্টেম সেল বা স্টেম কোষ কে প্লুরিপোটেন্ট কোষ (Pleuripotent Cell) বলে। জিনগত ত্রুটি দ্বারা আক্রান্ত কোনো রোগ গ্রস্ত মানুষের কোনো কলা থেকে স্টেম সেলকে বা স্টেম কোষ কে বের করে তার জিনগত ত্রুটি সারিয়ে এবং ওই স্টেম কোশের সম্পূর্ণ নিরাময় ঘটিয়ে পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়। জিন গত ত্রুটির নিরাময়ের এই ধরনের পদ্ধতিকে স্টেম কোষ থেরাপি বলা হয়।
স্টেম কোষ থেরাপির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মানুষের বেশকিছু জটিল রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন। যেমন হল, আর্থাইটিস, প্যারালাইসিস, হৃদপিণ্ড ঘটিত অসুখ, লিভার সিরোসিস, অ্যালঝাইমার, পারকিনসন এর মতো বিভিন্ন জটিল রোগ স্টেম কোষ থেরাপি বা স্টেম সেল থেরাপির পদ্ধতির মাধ্যমে সারানো যেতে পারে।
আরো পড়ুন: ভাসেকটোমি ও টিউবেকটোমি পার্থক্য
জিন থেরাপি থেকে প্রশ্ন এবং উত্তর :
১) জিন থেরাপি কাকে বলে?
— জিনগত ত্রুটির কারণে কোনো রোগ দেখা দিলে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ত্রুটিমুক্ত জিন প্রবিষ্ট করিয়ে রোগ নিরাময়কে জিন থেরাপি বলে।
২) দেহকোষ জিন থেরাপির একটি প্রকার লেখো।
— দেহকোষ জিন থেরাপির একটি প্রকার হলো DNA ভ্যাকসিন।
৩) থেরাপিউটিক ক্লোনিং কী?
— জিন প্রযুক্তি পদ্ধতিতে স্টেম কোষ এর নিরাময় ঘটিয়ে তাকে পুনরায় প্রতিস্থাপন করে রোগ নিরাময়ের পদ্ধতিকে স্টেম কোষ থেরাপি বা থেরাপিউটিক ক্লোনিং বলে।
৪) প্লুরিপোটেন্ট কোষ কী?
— স্টেম সেল হল দেহের মধ্যে থাকা কিছু অসম্পূর্ণ বিভেদিত কোশ। স্টেম সেল কে প্লুরিপোটেন্ট কোষ বলে।
😊 Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্টের আপডেট পেয়ে যান সরাসরি আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে ফ্রিতে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
😊 এই ওয়েবসাইট টিকে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য এটিকে আপনার ব্রাউজারে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করুন।
😊 এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ। নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অপশনে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে গিয়ে লাইক, ফলো করতে পারেন। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন এবং সাবস্ক্রাইব করতে পারেন আমাদের টুইটার হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেল।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলায়, বিজ্ঞানবুক -এ।
😊 পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক।
😊 ধন্যবাদ ।।