বিজ্ঞান বুকে আপনাকে স্বাগত। এই পোস্টে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হল ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের ঝুঁকি সম্বন্ধে। বিভিন্ন ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ ব্যবহারের ফলে কি কি ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে, সেগুলোই এই পোস্টে জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলতে, জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম -কে বোঝায়। আমরা বিভিন্ন প্রকার ফল বা সবজি কেনার সময়, তার উপর 'GMO' লেখা লোগো অনেক সময় দেখতে পাই। 'GMO' লেখা এই ফল বা সবজি গুলি হলো ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের থেকে প্রাপ্ত ফল বা সবজি।
ট্রান্সজেনেসিস পদ্ধতি কাকে বলে ?
কোনো জীবের মধ্যে, বাইরের কোনো জিন প্রবেশ করিয়ে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ তৈরি করা হয়। এমন বহিরাগত জিন সংযোজিত জীব কে 'GMO' বা জেনেটিকালি মডিফায়েড অর্গানিজম বলে। এই সম্পূর্ণ পদ্ধতিকে ট্রান্সজেনেসিস পদ্ধতি (Transgenesis process) বলে।
বিজ্ঞানীরা জিন প্রযুক্তি দ্বারা অনুজীব থেকে শুরু করে উন্নত প্রাণী পর্যন্ত এই ট্রান্সজেনেসিস পদ্ধতিতে অনেক জীবের পরিবর্তন ঘটিয়ে জেনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম উদ্ভব করেছেন। Bacillus thuringiensis এর Bt জিন জীবের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়।
আরো পড়ুন: ট্রান্সপোসন বা ট্রান্সপোসোনেবল এলিমেন্ট
ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদের ঝুঁকি (Hazards of Transgenic plants)
জেনেটিকালি মডিফায়েড বা 'GM' শস্যের বিপদ এড়াতে যেসব ঝুঁকি আছে, সেগুলি হলো,
1. জিনগত দূষণ:
পরিবেশের উপর ভবিষ্যতে কিরকম প্রভাব পড়তে পারে, তা বিশ্লেষণ না করেই বিভিন্ন প্রকার 'GM' শস্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে। বর্তমানে 'GM' উদ্ভিদে যে ট্রান্সজিন প্রবেশ করানো হচ্ছে, তা বিভিন্ন খাদ্য ও খাদকের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবদেহে বিস্তার করছে এবং প্রকৃতির জিনগত ভারসাম্য এরফলে বিঘ্নিত হচ্ছে, যার ফলে জিনগত দূষণ দেখা যাচ্ছে।
2. অ্যালার্জি:
জেনেটিক্যালি মডিফায়েড শস্যের মধ্যে যে ট্রান্সজিনের প্রবেশ ঘটানো হয়, সেই ট্রান্সজিন মানব শরীরে অনেক সময় অ্যালার্জির কারণ হচ্ছে।
3. টক্সিসিটি বা অধিবিষক্রিয়া:
বিভিন্ন প্রকার 'GMO' শস্যে ব্যবহৃত ট্রান্সজিন মানুষ সহ বিভিন্ন জীবদেহে টক্সিক প্রভাব অর্থাৎ বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
4. অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ:
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী 'GM' উদ্ভিদের থেকে প্রাপ্ত সবজি বা ফল খেয়ে মানবদেহের ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, যা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যেও সংক্রামিত হয়। এর ফলে মানুষ সহ অন্যান্য জীবদেরও ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়।
5. পেস্টিসাইড প্রতিরোধী পতঙ্গ:
ট্রান্সজেনেসিস পদ্ধতিতে সৃষ্টি, ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ Bt ক্রপের বিভিন্ন শস্য ভক্ষণকারী পতঙ্গরা পেস্টিসাইড প্রতিরোধী হয়ে ওঠে, এর ফলে ঐ সমস্ত পতঙ্গদের বা পেস্টিসাইডসদের, পেস্টিসাইড স্প্রে করে নিধন করা যায় না।
6. অক্ষতিকর পতঙ্গের বিলুপ্তি:
Bt শস্য ভক্ষন করার ফলে, Bt শস্যের Cry প্রোটিনের প্রভাবে বিভিন্ন উপকারী এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অক্ষতিকর পতঙ্গদের বিনাস ঘটে।
7. অতি পতঙ্গ নাশক:
Bt শস্যের Cry জিন বিভিন্ন উদ্ভিদের স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে, সেই শস্য ভক্ষণ করে বহু পতঙ্গের বিলুপ্তি ঘটে। এর ফলে পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটে এবং শস্য উৎপাদনে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতি হয়।
8. প্রাকৃতিক ভ্যারাইটির বিলুপ্তি:
Bt শস্যের ট্রান্সজিন প্রাকৃতিক ভ্যারাইটির মধ্যে স্থানান্তরিত হয়, ফলে প্রাকৃতিক ভ্যারাইটির স্বাভাবিক জিনোম বিঘ্নিত হয়। এর ফলে প্রাকৃতিক ভ্যারাইটির অংশ বিলুপ্ত হতে থাকে।
Bigyanbook এর সমস্ত নতুন পোস্ট সরাসরি পান আপনার ইমেইলের ইনবক্স এ। নিচে আপনার ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এছাড়াও এই ওয়েবসাইটটি কে সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য, আপনার ব্রাউজারে এটিকে বুকমার্ক হিসেবে অ্যাড করে রাখুন। পড়ুন বিজ্ঞান এর সমস্ত বিষয় সম্পূর্ণ বাংলাতে। পড়তে থাকুন বিজ্ঞানবুক। শেয়ার করুন বিজ্ঞানবুক এর সমস্ত আর্টিকেল আপনার বন্ধুদের সঙ্গে। এছাড়াও আপনি লাইক করতে পারেন বিজ্ঞান বুক এর ফেসবুক পেজ। বিজ্ঞানবুক এর ফেসবুক পেজ লাইক করার জন্য নিচে সোশ্যাল প্লাগিন অংশে ফেসবুক লেখাটিতে ক্লিক করে ফেসবুক পেজে গিয়ে বিজ্ঞানবুক কে ফলো করতে পারেন।
ধন্যবাদ।।